বিজ্ঞান ও গণিতের বিভিন্ন তথ্য আয়তাকারে সারি (আনুভূমিক রেখা) ও কলাম (উল্লম্ব রেখা) বরাবর সাজালে যে আয়তাকার বিন্যাস (Rectangular arays) পাওয়া যায় একে ম্যাট্রিক্স (Matrix) বলা হয়।
উদাহরণস্বরূপ: একজন ছাত্র একটি নির্দিষ্ট সপ্তাহে, কোন দিনে কত সময় (ঘন্টায়) গণিত, পদার্থবিদ্যা ও রসায়নবিদ্যা অধ্যয়ন করেছে তা আয়তাকারে সাজালে তিনটি সারি ও সাতটি কলামবিশিষ্ট একটি বিন্যাস পাওয়া যায়। যদি শিরােনাম (heading) উহ্য রাখি তাহলে তিনটি সারি ও সাতটি কলামবিশিষ্ট [ ] বা ( ) বা || ||‘ দ্বারা আবদ্ধ যে আয়তাকার বিন্যাস পাওয়া যায় এটিই ম্যাট্রিক্স। গাণিতিক এই বিন্যাস শুধুমাত্র তথ্য সংরক্ষণেই সীমাবদ্ধ নয়। গণিতের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানেও ম্যাটিক্সের ভূমিকা অপরিসীম।
যেকোনাে ধরনের তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য আমরা সর্বদা বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে থাকি। আর এই সংগৃহীত তথ্য এমনভাবে ম্যাট্রিক্সের মাধ্যমে সাজানাে হয় যাতে পরবতীতে ঐ তথ্য বােঝা ও বিশ্লেষণ করা সহজতর হয়। ম্যাট্রিক্সের সূচনা হয় খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের পূর্বে। প্রাচীন ব্যাবিলন ও চীন থেকেই ম্যাট্রিক্স সম্পর্কিত এই ধারণা পাওয়া যায়। এরপর সতের শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত গণিতের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের তেমন কোনাে প্রসার ঘটেনি।
ইংরেজ গণিতবিদ জেমস জোসেফ সিলভেস্টার (James Joseph Sylvester) (1814-1897) 1850 খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম ম্যাটিক্স সম্পর্কে ধারণা ব্যক্ত করেন। তারই সহকর্মী আর্থার ক্যালি (Arthur Cayley) (1821-1895 ) বিপরীত ম্যাট্রিক্সের ধারণাসহ ম্যাট্রিক্সের তাৎপর্য তুলে ধরেন এবং এটা তিনি 1853 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি 1858 খ্রিস্টাব্দে তার পত্রিকা ‘Memoir on the theory of matrices’ এ প্রথমে বিশ্লেষণমূলকভাবে ম্যাট্রিক্সকে প্রকাশ করেন। এ কারণে তাকে ম্যাট্রিক্সের জনক বলা হয়।বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী হাইজেনবার্গ (Heisenberg) 1925 খ্রিস্টাব্দে কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় ম্যাট্রিক্সের প্রথম ব্যবহার শুরু করেন।
গণিতে সমীকরণ জোটের সমাধান, পরিসংখ্যানের সম্ভাবনা তত্ত্বে, উচ্চতর অর্থনীতিতে, ব্যবসায় গণিতে আয়-ব্যয় হিসাব ইত্যাদিতে ম্যাট্রিক্স বহুলভাবে ব্যবহূত হয়।শেয়ারের ক্রয়-বিক্রয় হিসাব, কোন প্রকার ট্রেজারি বন্ডে কী পরিমাণ অর্থ বিনিয়ােগ করতে হবে তা বিপরীত ম্যাট্রিক্সের সাহায্যে সহজে নির্ণয় করা যায়।
ম্যাট্রিক্সের সারি ও কলামঃ ম্যাট্রিক্সে সংখ্যার আয়তকার বিন্যাসকে দুই প্রকারে বিশ্লেষণ করা হয়। যথা: আনুভূমিক রেখা বরাবর এবং উল্লম্ব রেখা বরাবর। সংখ্যাগুলির আনুভূমিক রেখাগুলিকে সারি এবং উল্লম্ব রেখাগুলিকে কলাম বলা হয়।
ম্যাট্রিক্সের ক্রম (Order of Matrix): m সংখ্যক সারি ও n সংখ্যক কলামবিশিষ্ট কোন ম্যাট্রিক্সকে m × n (পড়তে হবে m বাই (by) n) ক্রমের ম্যাট্রিক্স বলা হয়। উদাহরণ:
কে 3 × 2 ক্রমের ম্যাট্রিক্স বলা হয়।
কোনো ম্যাট্রিক্সের মোট ভুক্তি সংখ্যা, এর সারি ও কলামের গুণফলের সমান হয়। উপরের ম্যাট্রিক্সটিতে মোট ছয়টি ভুক্তি আছে এবং ম্যাট্রিক্সটির সারি ও কলামের গুণফলও ছয়।
ম্যাট্রিক্সের প্রকারভেদ
সারি ম্যাট্রিক্স (Row Matrix): যে ম্যাট্রিক্সের কেবল একটি সারি বিদ্যমান তাকে সারি ম্যাট্রিক্স বলা হয়।
কলাম ম্যাট্রিক্স (Column Matrix): যে ম্যাট্রিক্সের কেবল একটি কলাম বিদ্যমান তাকে কলাম ম্যাট্রিক্স বলা হয়।
বর্গ ম্যাট্রিক্স (Square Matrix): যে ম্যাট্রিক্সের সারি ও কলামের সংখ্যা সমান তাকে বর্গ ম্যাট্রিক্স বলা হয়।
ঊর্ধ্ব ত্রিভুজাকার ম্যাট্রিক্স (Upper Triangular Matrix): কোন বর্গ ম্যাট্রিক্স এর মূখ্য বা প্রধান কর্ণের নিম্নস্থ সবগুলি ভুক্তি শূন্য (০) হলে তাকে ঊর্ধ্ব ত্রিভুজাকার ম্যাট্রিক্স বলা হয়।
নিম্ন ত্রিভুজাকার ম্যাট্রিক্স (Lower Triangular Matrix): কোন বর্গ ম্যাট্রিক্স এর মূখ্য বা প্রধান কর্ণের উপরস্থ সবগুলি ভুক্তি শূন্য (০) হলে তাকে নিম্ন ত্রিভুজাকার ম্যাট্রিক্স বলা হয়।
কর্ণ ম্যাট্রিক্স (Diagonal Matrix): মূখ্য বা প্রধান কার্ণের ভুক্তি ব্যতীত অপর সকল ভুক্তি ব্যতীত ভুক্তি ‘0’ শূন্য হলে তাকে কর্ণ ম্যাট্রিক্স বলা হয়।
স্কেলার ম্যাট্রিক্স (Scalar Matrix): কোনো কর্ণ ম্যাট্রিক্সের অশূন্য ভুক্তিগুলি সমান হলে, ঐ কর্ণ ম্যাট্রিক্সকে স্কেলার ম্যাট্রিক্স বলা হয়।
একক বা অভেদক ম্যাট্রিক্স (Unit or Identity Matrix): কোনো বর্গ ম্যাট্রিক্সের মূখ্য বা প্রধান কার্ণের ভুক্তি ব্যতীত অপর সকল ভুক্তি ‘0’ (শূন্য) এবং প্রধান কর্ণের ভুক্তিগুলি 1 (এক) হলে তাকে অভেদক বা একক ম্যাট্রিক্স বলা হয়।
শূন্য ম্যাট্রিক্স (Zero or Null Matrix): কোনো ম্যাট্রিক্সের সকল ভুক্তি শূন্য ‘0’ হলে তাকে শূন্য ম্যাট্রিক্স বলা হয়।
সমঘাতি ম্যাট্রিক্স (Indempotent Matrix): একটি বর্গকার ম্যাট্রিক্স কে সমঘাতি ম্যাট্রিক্স বলা হয়।
ট্রান্সপোজ ম্যাট্রিক্স (Transpose Matrix): কোনো ম্যাট্রিক্স A এর যথাযথ সারি এবং কলাম বিনিময় করলে যে নতুন ম্যাট্রিক্স পাওয়া যায় তাকে A ম্যাট্রিক্স এর ট্রান্সপোজ ম্যাট্রিক্স বলা হয়।
উপ-ম্যাট্রিক্স (Sub Matrix): কোনো একটি ম্যাট্রিক্সের যেকোনো সংখ্যক কলাম ও সারির ভুক্তি বাদ দিয়ে গঠিত অপর একটি ম্যাট্রিক্সকে মূল ম্যাট্রিক্সের উপ-ম্যাট্রিক্স বলা হয়।
ব্যতিক্রমী ও অব্যতিক্রমী ম্যাট্রিক্স (Singular and Nonsingular matrices)
ব্যতিক্রমী (Singular) ম্যাট্রিক্স : যদি কোনো ম্যাট্রিক্সের নির্ণায়কের মান শূন্য (0) হয়, তবে ঐ ম্যাট্রিক্সকে ব্যতিক্রমী বলা হয়।
অব্যতিক্রমী (Nonsingular) ম্যাট্রিক্স : যদি কোনো ম্যাট্রিক্সের নির্ণায়কের মান শূন্য না হয়, তবে ঐ ম্যাট্রিক্সকে অব্যতিক্রমী ম্যাট্রিক্স বলা হয়।