যে কৃষিব্যবস্থায় একই জমিতে বিভিন্ন বছরে বা বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফসল উৎপন্ন করা হয়, তাকে শস্যাবর্তন (Crop Rotation) বলা হয়। এই পদ্ধতিতে একটি বা দুটি প্রধান ফসল উৎপন্ন করা হয় এবং এর মাঝে মাঝে অন্যান্য ফসল উৎপন্ন করা হয়। যেমন– ধান-এর পরে ডাল বা গুটি জাতীয় ফসল ফলালে ধান চাষের ফলে জমির যে নাইট্রোজেন ঘাটতি হয় , তা পূরণ হয়ে যায় ।
তাই এইরূপ কৃষিপদ্ধতির মাধ্যমে জমির উর্বরাশক্তির মধ্যে একটি ভারসাম্য রক্ষা পায় এবং সার প্রয়ােগের ব্যয়ও হ্রাস পায় । ফলে এই পদ্ধতিতে জমি থেকে বেশি ফসল উৎপাদিত হয় । শস্যাবর্তন মিশ্ৰকৃষির একটি প্রধান অঙ্গ । শস্যাবর্তনের মাধ্যমেই মিশ্ৰকৃষিতে সারাবছর ফসল উৎপাদিত হয় এবং নানারকম ফসল ও উৎপাদন থেকে আয় হয় বলে একটি ফসলের দাম কমে গেলেও কৃষক বিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না । এই শস্যাবর্তনের আরেক নাম চক্ৰকৃষি ।
শস্যাবর্তন গুরুত্ব
শস্যাবর্তন-এর গুরুত্বগুলি নিম্নরূপ–
১. জমির উর্বরতা বজায় রাখা, যেমন— ধানচাষের পর ডালজাতীয় ফসল চাষ করলে মাটিতে নাইট্রোজেনের মাত্রা বজায় থাকে।
২. শস্য উৎপাদনে বৈচিত্র্য আসে।
৩. জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল পর্যায়ক্রমিকভাবে চাষ করা হয় বলে গাছের রােগ ও পােকার আক্রমণের পরিমাণ কম হয়।
৪. সারাবছর ধরে একের বেশি ফসল চাষ হয় ফলে কৃষক লাভের মুখ দেখেন।
৫. শস্যাবর্তন পদ্ধতিতে কৃষিকার্য করলে কিছু কিছু শস্যের মৃত্তিকায় নাইট্রোজেন সংযােজনের ক্ষমতা দ্বারা মৃত্তিকায় নাইট্রোজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া যায়।
৫. বিভিন্ন ফসলের রােপণ ও শস্যাবর্তনের সময় ভিন্ন হওয়ার কারণে বছরের বিভিন্ন সময়ে ভূমিকৰ্ষণ হয়ে থাকে।
৬. ফসলগুলির জৈব পদার্থ সংযােজনের ক্ষমতার ভিন্নতাও মৃত্তিকার জৈব পদার্থের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
৭. বিভিন্ন ফসলের জন্য ভিন্ন ভিন্ন আর্দ্রতার প্রয়ােজন হওয়ায় সব ফসলের ক্ষেত্রে জলসেচের প্রয়ােজন হয়, তাই মৃত্তিকার উপরিভাগে খনিজ পদার্থও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়।
৮. কোনাে কোনাে ফসল উৎপাদনের অর্থনৈতিক ব্যয় কম হওয়ার কারণে কৃষকদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি পায়, যার দ্বারা কৃষকেরা নিজস্ব যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে সমর্থ হয় এবং পরবর্তী কৃষিকে আরাে উন্নত করতে সুযােগ পাওয়ায় সামগ্রিক উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব হয়।