অপারেটিং সিস্টেম কি? What is Operating System in Bangla?

অপারেটিং সিস্টেম (Operating System) হচ্ছে সিস্টেম সফটওয়্যার যা কম্পিউটারের কাজ করার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে এবং শিডিউলিং, ডিবাগিং, ইনপুট/আউটপুট কন্ট্রোল, একাউন্টিং, কম্পাইলেশন, স্টোরেজ অ্যাসাইনমেন্ট, ডেটা ম্যানেজমেন্ট এবং আনুষঙ্গিক কাজ করে। অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারের প্রাণ। মানুষ যতবার কম্পিউটার চালু করে ততবারই হার্ডওয়্যার সজ্জিত কম্পিউটারের ভেতরে আগে প্রাণ সচল করে তারপর তাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়। অপারেটিং সিস্টেম একটি সফটওয়্যার প্রােগ্রাম।

 

অপারেটিং সিস্টেমের ধারণা

অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারগুলাে সজীব হয়ে ওঠে। ইংরেজি শব্দ Operate থেকে Operating শব্দটি এসেছে। এর বাংলা অর্থ হলো পরিচালনা করে। কম্পিউটারকে পরিচালনা করে যে সফটওয়্যার তাই অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যার। প্রাথমিক অবস্থায় অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা হয়েছিল মেইনফ্রেম কমপিউটারের জন্য ১৯৫১ সালে। অপারেটিং সিস্টেমটি যুক্তরাষ্টের জেনারেল মটর রিসার্চ ল্যাবরেটরি কর্তৃক আইবিএম কর্পোরেশন এর জন্য তৈরি হয়েছিল। পারসােনাল কম্পিউটার বা মাইক্রো-কম্পিউটারে অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহৃত হতে থাকে ১৯৭১ সাল থেকে। এ অপারেটিং সিস্টেমের নাম ছিল CP/M।

 

অপারেটিং সিস্টেম (Operating System)

কম্পিউটার কতগুলাে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের সমন্বয়। আর কম্পিউটারকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়ার জন্য আছে বিভিন্ন এপ্লিকেশন সফটওয়্যার। অপারেটিং সিস্টেম হচ্ছে কতগুলাে প্রােগ্রামের সমন্বয় যারা কম্পিউটারের সকল ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসগুলাের কাজ নিয়ন্ত্রণ (Control), পর্যবেক্ষণ (Observation) ও তত্ত্বাবধান (Supervice) করার মাধ্যমে এপ্লিকেশন সফটওয়্যারের চাহিদাপূরণ করে ও কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে তার চাহিদামতাে আউটপুট পেতে সহায়তা করে। সংক্ষেপে অপারেটিং সিস্টেমকে ‘ওএস’ (OS) বলা হয়।

 

 

 

 

 

 

 

 

অপারেটিং সিস্টেমের সংগঠন

অপারেটিং সিস্টেমের নিজস্ব একটি কর্মপদ্ধতি আছে। কর্মপদ্ধতির উপর ভিত্তি করে অপারেটিং সিস্টেমকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।

১. নিয়ন্ত্রণ প্রােগ্রাম (Control Programme)

২. সেবামূলক প্রােগ্রাম (Service Programme)

 

অপারেটিং সিস্টেম কখন সক্রিয় হয় ও কি করে?

আমরা যখন কম্পিউটারের পাওয়ার বাটনে চাপ দিয়ে কম্পিউটারে বৈদ্যুতিক সংযােগ দিই সে মূহুর্ত থেকে কম্পিউটার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে অপারেটিং সিস্টেম। অপারেটিং সিস্টেম লােড হয়ে তার প্রথম কাজ হিসেবে কম্পিউটার পরিচালনার সাথে সম্পৃক্ত সকল ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসকে এক এক করে সংকেত পাঠিয়ে পরীক্ষা করে দেখে নেয় তারা ঠিকমতাে কাজ করছে কি না। সকল হার্ডওয়্যার ঠিকমতাে কাজ করছে নিশ্চিত হবার পর অপারেটিং সিস্টেম প্রয়ােজনীয় এপ্লিকেশন সফটওয়্যার লােড করে। এপ্লিকেশন সফটওয়্যারকেও অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যার পরিচালনা করে থাকে। ১৯৫৬ সালে জেনারেল মটরস নামে কোম্পানি কর্তৃক তৈরিকৃত GM-NAA 1/0 হচ্ছে প্রথম অপারেটিং সিস্টেম।

 

 

 

 

 

 

 

অপারেটিং সিস্টেমের গুরুত্ব

নিচে অপারেটিং সিস্টেমের কতগুলাে গুরুত্ব তুলে ধরা হলাে।

 

অপারেটিং সিস্টেম সকল কাজের মধ্যে, সকল ডিভাইসের মধ্যে সমন্বয়কারী ভূমিকা পালন করে।

কাজের পরিবেশ তৈরি করে।

মেমােরি ব্যবস্থাপনা করে।

ইনপুট/আউটপুট অপারেশন করে।

ফাইল সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করে।

কার্যাবস্থায় সমস্যার রিপাের্ট করে ও সমাধান দেয়।

রিসাের্স ম্যানেজমেন্ট করে।

ব্যবহারকারী ও প্রােগ্রামের নিরাপত্তা প্রদান করে।

নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনা করে।

অপারেটিং সিস্টেমের কার্যাবলি

কম্পিউটার পরিচালনার জন্য অপারেটিং সিস্টেম ধারাবাহিকভাবে কাজ করে থাকে। নিচে উল্লেখযােগ্য কয়েকটি কাজ সম্পর্কে আলােচনা করা হলোঃ

কম্পিউটার চালু করা ও পরিচালনা করাঃ কম্পিউটারের পাওয়ার বাটনে চাপ দেয়ার পর বিদ্যুৎ প্রবাহ দ্বারা অপারেটিং সিস্টেম প্রাথমিক ধাপে র‌্যামে লােড হয়। এর পরের ধাপে কম্পিউটারের সাথে যুক্ত সকল পেরিফেরাল ডিভাইসসমূহ ঠিক আছে কি না তা একে একে পরীক্ষা করতে থাকে। তৃতীয় ধাপে এপ্লিকেশন প্রােগ্রাম লােড করতে শুরু করে ও তারপর ব্যবহারকারীর নির্দেশ গ্রহণের জন্য কমান্ড প্রম্পট বা ডেস্কটপে এসে স্থির হয়।

এপ্লিকেশন প্রােগ্রাম পরিচালনা করাঃ এপ্লিকেশন প্রােগ্রাম পরিচালনা করা অপারেটিং সিস্টেমের একটি প্রধান কাজ। কোন প্রােগ্রাম পরিচালনার জন্য যে সকল রুটিন ও ফাংশন প্রােগ্রাম প্রয়ােজন হয় অপারেটিং সিস্টেম তা সরবরাহ করে থাকে।

ইনপুট/আউটপুট অপারেশনঃ ব্যবহারকারীর প্রােগ্রাম সরাসরি কোন ইনপুট বা আউটপুট ডিভাইস পরিচালনা করতে পারে না, তাই অপারেটিং সিস্টেম-এ সকল সুবিধা প্রদান করে থাকে।

 

 

 

 

 

 

 

ফাইল সিস্টেম নিয়ন্ত্রণঃ ফাইল সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করা অপারেটিং সিস্টেমের আর একটি প্রধান কাজ। অপারেটিং সিস্টেমই স্টোরেজ ডিভাইসে ফাইল সিস্টেমের সংরক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ এবং সমন্বয় সাধন করে থাকে।

 

কার্যাবস্থায় সমস্যার রিপাের্ট করা ও সমাধান দেয়াঃ প্রতিটি নির্দিষ্ট ত্রুটির জন্য অপারেটিং সিস্টেম সঠিক পদক্ষেপ নেয়, প্রয়ােজনে রিপাের্ট করে এবং সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ত্রুটি সারানােরও ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

 

 

 

 

 

 

 

 

রিসাের্স ম্যানেজমেন্টঃ কম্পিউটার সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য অপারেটিং সিস্টেম প্রােগ্রাম এবং হার্ডওয়্যার রিসাের্স (Resource) সবার মাঝে গুরুত্ব অনুসারে বণ্টন করে।

 

একাউন্টিংঃ অনেক সময় ব্যবহারকারী কতটকু পরিমাণে সিস্টেমের কোন অংশ ব্যবহার করেছে তা নির্ণয় করার প্রয়ােজন দেখা দেয়। এ তথ্য সংরক্ষণ কাজও অপারেটিং সিস্টেম করে থাকে।

 

 

 

 

 

 

 

 

তত্ত্বাবধানঃ একাধিক রকম বিভিন্ন কাজ একই সাথে পরিচালনা করার সময় যেন একটি কাজ অপরটির কাজে কোনরুপ বিঘ্ন সৃষ্টি না করে তা অপারেটিং সিস্টেম নিশ্চিত করে।

 

 

 

 

 

 

 

 

টাস্ক ম্যানেজমেন্টঃ অপারেটিং সিস্টেমের টাস্ক ম্যানেজমেন্ট প্রােগ্রাম ব্যবহারকারীর নির্দেশ গ্রহণ এবং বিশ্লেষণ করে। সিপিইউ টাইম স্লাইমকে বিভিন্ন টাস্কের মধ্যে বন্টন এবং কন্ট্রোল করে যাতে সকল টাস্কই সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়।

ফাইল ম্যানেজমেন্টঃ অপারেটিং সিস্টেম ফাইল ম্যানেজমেন্ট যেমন ফাইল তৈরি, ডিলিট, অ্যাকসেস, কপি, মুভ, সংরক্ষণ ইত্যাদি কাজ করে থাকে। তাছাড়া ডেটা ও প্রােগ্রামিং ম্যানিপুলেশন (Manipulation) যেমন- ডেটা আদান-প্রদান, স্থানান্তর ও সংরক্ষণের কাজ করে থাকে।

ইউটিলিটিসঃ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীকে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা যেমন- ফাইল ডিফ্রাগমেন্টেশন, ডেটা কম্প্রেশন, ব্যাক আপ, ডেটা রিকোভারি, অ্যান্টিভাইরাস ইত্যাদি ইউটিলিটিস প্রদান করে।

কয়েকটি অপারেটিং সিস্টেম
চাহিদা ও ব্যবহারকারীদের মানের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন কম্পিউটারে বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। নিম্নে কয়েকটি অপারেটিং সিস্টেমের নাম উল্লেখ করা হলাে।
১. এমএস ডস (MS DOS)
২. পিসি ডস (PC DOS)
৩. এমএস উইন্ডােজ (MS Windows)
৪. এমএস উইন্ডােজ এনটি (MS Windows NT)
৫. ইউনিক্স (Unix)
৬. লিনাক্স (Linux)
৭. ম্যাক ওএস (Mac OS)
৮. সান সােলারিস (Sun Solaris)
৯. OS/2 Wrap
১০. বিইওএস (Be OS)
১১. এন্ড্রয়েড (Android)
১২. এআইএক্স (AIX)
১৩. সিম্বিয়ান (Symbian)
১৪. জেনিক্স XENIX

১৫. উবুন্টু
  • ম্যাক ওএস (Mac OS) : Mac OS এর পূর্ণরূপ হলো Macintosh Operating System। এটি Apple Computer Inc-এর তৈরি একটি Operating System। এটি কেবল Apple Macintosh কম্পিউটারগুলোতেই ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়। এটি একটি চিত্র ভিত্তিক Operating System যা ১৯৮৪ সালে তৈরি করা হয়। সহজেই এটি ব্যবহার করা যায়, একই সাথে শক্তিশালী Graphics interface এবং User friendly হওয়ায় এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়ে চলছে।
  • উবুন্টু (Ubuntu) : উবুন্টু হচ্ছে একটি জনপ্রিয় ওপেন সোর্স কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম। এটি লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনের উপর ভিক্তি করে তৈরি করা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রচলিত একটি প্রবাদ ‘উবুন্টু’ থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে, যার অর্থ হলো ‘অপরের জন্য মানবতা’। প্রাথমিকভাবে পার্সোনাল কম্পিউটারে ব্যবহারের জন্য উবুন্টু তৈরি করা হয়েছে। তবে এর সার্ভার সংস্করণও রয়েছে।
  • লিনাক্স (Linux) : লিনাক্স একটি অপারেটিং সিস্টেম। অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেম টাকা দিয়ে কিনতে হয়, যেগুলো যথেষ্টই মুল্যবান। কিন্তু লিনাক্স হলো মুক্ত অপারেটিং সিস্টেম, যেটি বিনামূল্যে পাওয়া যায়। এটি অত্যন্ত কার্যকরী এবং জনপ্রিয় একটি অপারেটিং সিস্টেম। লিনাক্সের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় না।