কম্পিউটার (Computer) হচ্ছে একটি ইলেকট্রনিক গণনাকারী যন্ত্র যা তথ্য গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা বিশ্লেষণ এবং উপস্থাপন করে। ব্যবহারকারী কোনো ডেটা বা উপাত্ত কম্পিউটারে সরবরাহ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম্পিউটার তা প্রক্রিয়াকরণ (প্রসেসিং) করে কাজের ফলাফল প্রদান করে।
Computer শব্দটির সাধারণ অর্থ গণক যন্ত্র। ল্যাটিন শব্দ Compute থেকে ইংরেজী Computer শব্দের উৎপত্তি। Compute শব্দটির অর্থ গণনা বা হিসাব নিকাশ করা। কম্পিউটারের সাহায্যে মূলতঃ যােগ, বিয়ােগ, গুণ, ভাগ ইত্যাদি কার্যাবলী সম্পাদন করা যায়। কিন্তু বর্তমান যুগে কম্পিউটারের বহুমুখী ব্যবহারের ফলে কম্পিউটারের সংঙ্গা অনেক ব্যাপকতা লাভ করেছে।
কোন সীমিত সংঙ্গা দিয়ে আর কম্পিউটারকে গন্ডীবদ্ধ করা যায় না। কম্পিউটার সেকেন্ডের মধ্যে কোটি কোটি হিসাব-নিকাশ করতে পারে। কম্পিউটারে কাজের গতি হিসাব করা হয় ন্যানোসেকেন্ডে। ন্যনোসেকেন্ড হচ্ছে এক সেকেন্ডের একশত কোটি ভাগের একভাগ সময় মাত্র। কম্পিউটারের ভিতরে অনেক বর্তনী থাকে। ইলেকট্রন প্রবাহের মাধ্যমে কম্পিউটারের যাবতীয় কাজকর্ম পরিচালিত হয়। ইলেকট্রনিক সংকেতের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে কম্পিউটার ল্যাংগুয়েজ বা কম্পিউটারের ভাষা।
কম্পিউটারের বোধগম্য এ ভাষার মাধ্যমে কম্পিউটারে যে নির্দেশ দেয়া হয় তারই ভিত্তিতে কম্পিউটার ফলাফল প্রদান করে। কম্পিউটারের এ নির্দেশাবলিকে বলা হয় প্রোগ্রাম। প্রোগ্রাম ছাড়া কম্পিউটার একটি জড় পদার্থ ভিন্ন আর কিছু নয়। উপযুক্ত প্রোগ্রামের ফলে কম্পিউটার জড় পদার্থ হতে গাণিতিক শক্তিসম্পন্ন বুদ্ধিমান যন্ত্রে পরিণত হতে পারে।
কম্পিউটারের কাজ (Function of Computer)
কম্পিউটারের চারটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ নিচে উল্লেখ করা হলাে–
সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবহারকারী দ্বারা তৈরি প্রােগ্রাম (Programs) কম্পিউটার গ্রহণ করে মেমােরিতে সংরক্ষণ করে এবং ব্যবহারকারীর নির্দেশে কম্পিউটার প্রােগ্রাম নির্বাহ (Execute) করে।
কী-বাের্ড (Keyboard), মাউস (Mouse), জয়স্টিক (Joystick), ডিস্ক ইত্যাদির মাধ্যমে কম্পিউটার ডেটা (Data) গ্রহণ করে।
ডেটা প্রক্রিয়াকরণ (Process ) করে।
মনিটর (Monitor), প্রিন্টার (Printer) ইত্যাদির মাধ্যমে কম্পিউটার ফলাফল প্রকাশ করে।
কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Computer)
বিভিন্ন যন্ত্রের মতাে কম্পিউটারেরও নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। উল্লেখযােগ্য কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হলাে–
দ্রুতগতি (High speed)
নির্ভুলতা (Correctness)
সূক্ষ্মতা (Accuracy)
বিশ্বাসযােগ্যতা (Reliability)
ক্লান্তিহীনতা (Dilligence)
স্মৃতিশক্তি (Memory)
স্বয়ংক্রিয়তা (Automation)
যুক্তিসংগত সিদ্ধান্ত (Logical Decision)
বমুখিতা (Versatility)
অসীম জীবনীশক্তি (Endless Life)
নিচে কম্পিউটারের উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্যগুলাের বিস্তারিত আলােচনা করা হলাে।
দ্রুতগতি (High speed) : বৈদ্যুতিক সিগন্যালের মাধ্যমে কাজ করে বিধায় কম্পিউটার খুব দ্রুতগতিতে কাজ করতে পারে। কম্পিউটার এক সেকেন্ডে কয়েক কোটি যােগ করতে পারে। কম্পিউটারে সময়ের একক হলাে ন্যানােসেকেন্ড, পিকোসেকেন্ড ইত্যাদি।
নির্ভুলতা (Correctness) : কম্পিউটার একটি মেশিন। মানুষের দেয়া সূত্র ও যুক্তির মাধ্যমে কম্পিউটার ফলাফল প্রদান করে। কম্পিউটার কখনও ভুল করে না। কম্পিউটারের নির্ভুলতা শতকরা ১০০ ভাগ।
সূক্ষ্মতা (Accuracy) : কম্পিউটারের স্মৃতিশক্তি অনেক বেশি। তাই অনেক ঘর পর্যন্ত নির্ভুলভাবে গাণিতিক ক্রিয়াকলাপ করতে পারে। এ কারণে কম্পিউটারের সূক্ষ্মতা অনেক বেশি ধরে নেয়া যায়।
বিশ্বাসযােগ্যতা (Reliability) : কম্পিউটার নির্ভুল ও সূক্ষ্মভাবে কাজ করে। কাজ করার জন্য কম্পিউটার মানুষের দেয়া নির্দেশ ব্যবহার করে। কম্পিউটার ভুল করে না কিন্তু মানুষ করে, এটা প্রমাণিত।
ক্লান্তিহীনতা (Dilligence) : কম্পিউটার একটি যন্ত্র। আর এ যন্ত্রের একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ক্লান্তিহীনতা। কম্পিউটার রাত দিন ক্লান্তিহীন, বিরক্তিহীন এবং বিশ্রামহীনভাবে কাজ করতে পারে।
স্মৃতিশক্তি (Memory) : কম্পিউটারের নিজস্ব স্মৃতিশক্তি (Memory) আছে। কম্পিউটারের মেমােরিতে নির্দেশ (প্রােগ্রাম), প্রয়ােজনীয় ডেটা এবং প্রক্রিয়াজাত ফলাফল (ইনফরমেশন) সংরক্ষিত করে রাখা যায়।
স্বয়ংক্রিয়তা (Automation) : কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে। এ কারণে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে মানুষের পরিবর্তে কম্পিউটারকে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া আরাে অনেক ক্ষেত্রে যেমন, কল-কারখানায়, বিস্ফোরক গবেষণায় কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।
যুক্তিসংগত সিদ্ধান্ত (Logical Decision) : বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবস্থা বিচার করে কী কাজ করতে হবে তার আগাম নির্দেশ দিয়ে রাখলে যুক্তিসংগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিভিন্ন কাজ কম্পিউটার নিজে নিজে করতে পারে।
ব্যবহারের বহুমুখিতা (Versatility) : বহুমুখী কাজে কম্পিউটারকে ব্যবহার করা যায়। কম্পিউটার একটি প্রােগ্রামনির্ভর যন্ত্র। যখন যে প্রোগ্রাম কম্পিউটারে লােড করা থাকে সে প্রােগ্রাম অনুসরণ করে কম্পিউটার কাজ করতে পারে। একটি কম্পিউটারে যেমন হিসাব-নিকাশের প্রােগ্রাম ব্যবহার করে হিসাব-নিকাশ করা যায় আবার মাল্টিমিডিয়া সফটওয়্যার ব্যবহার করে ছবি দেখা যায় বা গান শােনা যায়।
অসীম জীবনসীমা (Endcess Life) : কম্পিউটার চালানাে হয় প্রােগ্রাম ব্যবহার করে। মানুষের জীবনের যেমন একটি নির্দিষ্ট সময় আছে কিন্তু গােগ্রামের কোন নির্দিষ্ট জীবনসীমা নেই। মানুষের তৈরি প্রোগ্রাম বছরের পর বছর সমান যােগ্যতায় একই মানে কাজ করে যেতে পারে। দীর্ঘদিন কাজ করার পরও প্রােগ্রামের কোন মানের কমতি হয় না।
কম্পিউটার দিয়ে কাজ করার সুবিধা
কম্পিউটার দিয়ে কাজ করার অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। যথা-
- কম্পিউটার খুব দ্রুত গতিতে কাজ করতে পারে।
- নির্ভুল ফলাফল পাওয়া যায়।
- মেমোরিতে অনেক তথ্য সেভ করে রাখা যায় এবং খুব তাড়াতাড়ি কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
- স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে থাকে।
- যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
- ডেটা প্রসেসিং এর মাধ্যমে ডেটা বিশ্লেষণ করতে পারে।
- একই কম্পিউটার বহু ধরনের কাজ করতে পারে।
- কল্পনাহীনভাবে টানা দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে পারে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার
- ওয়ার্ড প্রসেসিং বা লেখালেখির কাজে টাইপরাইটারের বিকল্প হিসেবে অফিস আদালতে কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়।
- ব্যাংকিং, শেয়ার বাজার ও ইনস্যুরেন্স ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে লেনদেনের হিসেব তৈরি ও সংরক্ষণের কাজে গতানুগতিক পদ্ধতি বাদ দিয়ে আজকাল কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।
- অফিসের যাবতীয় ব্যবস্থাপনার কাজে আজকাল কম্পিউটার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
- শিল্প ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি পরিচালনা বা নিয়ন্ত্রণের কাজেও কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে।
- যন্ত্রপাতি, মোটরগাড়ি, জাহাজ, অ্যারোপ্লেন, ঘরবাড়ি, ব্রিজ ইত্যাদি ডিজাইন করার ক্ষেত্রে।
- বিভিন্ন ধরনের গবেষণামূলক কাজে।
- একস্থান থেকে অন্যস্থানে সংবাদ প্রেরণের ক্ষেত্রে।
- শিক্ষাক্ষেত্রে।
- বিনোদনের ক্ষেত্রে যেমন টিভি দেখা, ভিডিও দেখা ও গান বাজানো ইত্যাদি।
- মুদ্রণশিল্পে প্রকাশনামুলক যে কোন কাজে।
- যোগাযোগ ব্যবস্থার টিকিট বিক্রি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ট্রান্সপোর্টের ডিরেকশন ও নির্ণয়ের কাজে।
- আধুনিক সামরিক বাহিনীতে নিরাপত্তা রক্ষী হিসেবে।
- আবহাওয়া পূর্বাভাস পর্যবেক্ষণের কাজে।
- প্রধান বৈসাদৃশ্য হলো- কম্পিউটার নিজে কোনো কাজ করতে পারে না, যা মানুষ পারে। মানুষ যা নির্দেশ দেয় কম্পিউটার তা-ই করতে পারে। তবে তা বিশ্বস্তভাবে, নির্ভুলভাবে ও দ্রুতগতিতে করতে পারে।
- মানুষ চিন্তা করতে পারে, যা কম্পিউটার পারে না।
- মানুষের উদ্ভাবনী শক্তি আছে, কম্পিউটারের তা নেই।
- মানুষের মধ্যে মানবীয় গুণ যেমন নীতি-নৈতিকতা, প্রেম-ভালোবাসা, লজ্জা, রাগ, ঘৃণা, আনন্দ, ভয় প্রভৃতি রয়েছে। কম্পিউটারের মধ্যে এসকল বিষয় অনুপস্থিত।
- মানুষের শরীর একই রকম হলেও পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ প্রতিটি মানুষ হতে দেখতে আলাদা। কম্পিউটারের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি দেখা যায় না।