ভরবেগ কাকে বলে? (What is called Momentum in Bengali/Bangla?)
কোন বস্তুর ভর ও বেগের গুণফলকেই ভরবেগ বলে। একে P দ্বারা সূচিত করা হয়। অর্থাৎ, m ভরবিশিষ্ট কোন বস্তু v বেগে চললে, ভরবেগ, P = mvi
ভরবেগ একটি ভেক্টর রাশি। SI পদ্ধতিতে ভরবেগের একক kgms-1। ভরবেগের মাত্রা সমীকরণ, [p] = [MLT-1]।
ভরবেগ কত প্রকার ও কি কি?
বস্তুর গতির উপর ভিত্তি করে ভরবেগ দুই প্রকার। যথা
(১) রৈখিক ভরবেগ (Linear Momentum)
(২) কৌণিক ভরবেগ (Angular Momentum)
রৈখিক ভরবেগ কাকে বলে?
কোন বস্তুর ভর এবং তার রৈখিক বেগের গুণফলকে রৈখিক ভরবেগ বলে।
কৌণিক ভরবেগ কাকে বলে? (What is called Angular Momentum?)
ঘূর্ণন গতির ক্ষেত্রে ঘূর্ণায়মান বস্তুর ঘূর্ণন অক্ষের সাপেক্ষে ঘূর্ণন জড়তা ও কৌণিক বেগের গুণফলকে ঐ অক্ষের সাপেক্ষে ঘূর্ণায়মান বস্তুটির কৌণিক ভরবেগ বলে। কৌণিক ভরবেগকে সাধারণত L দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এটি একটি ভেক্টর রাশি।
কৌণিক ভরবেগের নিত্যতা (Conservation of angular momentum)
কৌণিক গতির জন্য নিউটনের প্রথম সূত্র হতে আমরা জানি বাহ্যিক টর্কের ক্রিয়াতেই কেবলমাত্র বস্তুর কৌণিক বেগের তথা কৌণিক ভরবেগের পরিবর্তন হয়। টর্কের ক্রিয়া না থাকলে বস্তুটি সমকৌণিক বেগে ঘুরতে থাকে। অর্থাৎ সময়ের সাপেক্ষে কৌণিক বেগ ধ্রুব হয়। ফলে কৌণিক ভরবেগও ধ্রুব হয়। একে কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র বা নিত্যতা বলে।
সুতরাং বলা যায়, কোনো বস্তুর উপর টর্কের লব্ধি শূন্য হলে বস্তুটির কৌণিক ভরবেগ সংরক্ষিত থাকে।
কৌণিক ভরবেগ সংক্রান্ত রাশিমালা (The quantity related angular velocity)
কৌণিক সরণ (Angular displacement) : কোন ঘূর্ণনশীল বস্তুকণা বৃত্তাকার পথে ঘূর্ণন অক্ষ বা কেন্দ্রের সাপেক্ষে যে কৌণিক দূরত্ব অতিক্রম করে, তাকে উক্ত কণার কৌণিক সরণ বলে। অন্য কথায়, একটি বস্তু কণার ব্যাসার্ধ ভেক্টরের কৌণিক অবস্থানের পরিবর্তনকে কৌণিক সরণ বলে।
কৌণিক সরণকে সাধারণত রেডিয়ান (radian) এককে পরিমাপ করা হয়। কোন বৃত্তের ব্যাসার্ধের সমান দীর্ঘচাপ বৃত্তের কেন্দ্রে যে কোণ উৎপন্ন করে তাকে এক রেডিয়ান বলে।
কৌণিক বেগ (Angular velocity) : সময়ের সাথে সাথে কোন বস্তুকণার কৌণিক সরণের হারকে তার কৌণিক বেগ বলে। একে w অক্ষর দিয়ে প্রকাশ করা হয়। এটিও একটি ভেক্টর রাশি এবং কৌণিক সরণের মত এর দিকও ডানহাতি স্ক্র বিধির সাহায্যে একই স্ক্রু ভাবে নির্ণয় করা হয়।
সাধারণত কৌণিক বেগকে রেডিয়ান/সেকেন্ড (radian / sec বা সংক্ষেপে rad/s) এককে প্রকাশ করা হয়। যন্ত্রবিদ্যা বা ইঞ্জিনিয়ারিং-এ আরেকটি একক প্রচলিত আছে। এর নাম আবর্তন/মিনিট (revolution per minute, সংক্ষেপে rpm)।
গড় কৌণিক বেগ (average angular velocity) : যে কোন সময় ব্যবধানে কোন বস্তুর কৌণিক সরণের হারকে উক্ত বস্তুর গড় কৌণিক বেগ বলে।
তাৎক্ষণিক কৌণিক বেগ (instantaneous angular velocity) : সময় ব্যবধান শূন্যের কাছাকাছি হলে কোন বস্তুর কৌণিক সরণের হারকে উক্ত বস্তুর তাৎক্ষণিক কৌণিক বেগ বলে। তাৎক্ষণিক কৌণিক বেগকে কোন বস্তুকণার প্রকৃত কৌণিক বেগ বলে।
কৌণিক ত্বরণ (Angular Acceleration) : সময়ের সাথে সাথে কোন বস্তুকণার কৌণিক বেগের পরিবর্তনের হারকে তার কৌণিক ত্বরণ বলে। কৌণিক ত্বরণকে সাধারণত গ্রীক অক্ষর a (আলফা) দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
গড় কৌণিক ত্বরণ (average angular acceleration) : যে কোন সময় ব্যবধানে কোন বস্তুর কৌণিক বেগের পরিবর্তনের হারকে উক্ত বস্তুর গড় কৌণিক ত্বরণ বলে।
তাৎক্ষণিক কৌণিক ত্বরণ (instantaneous angular acceleration) : সময় ব্যবধান শূণ্যের কাছাকাছি হলে কোন বস্তুর কৌণিক বেগের পরিবর্তনের হারকে উক্ত বস্তুর তাৎক্ষণিক কৌণিক ত্বরণ (instantaneous angular acceleration) বলে। তাৎক্ষণিক কৌণিক ত্বরণকে কোন বস্তুকণার প্রকৃত কৌণিক ত্বরণ বলে।
ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র
ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র পদার্থ বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি। একটি ব্যবস্থার মোট ভরবেগের কোন পরিবর্তন হয় না ভরবেগের এ সংরক্ষণ সূত্রকে কাজে লাগিয়ে রকেটের উড্ডয়ন থেকে শুরু করে উচ্চ শক্তি ত্বরক যন্ত্রে উৎপাদিত অনেক মৌলিক কণার আবিষ্কারও সম্ভব হয়েছে। নিউটনের গতির তৃতীয় সূত্রের সাহায্যে এ সূত্র প্রতিপালন করা যায়।
ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র : “একাধিক বস্তুর মধ্যে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া ছাড়া অন্য কোন বল কাজ না করলে কোন নির্দিষ্ট দিকে তাদের মোট ভরবেগের কোন পরিবর্তন হয় না।”
ব্যাখ্যা : ভিন্ন ভিন্ন বেগে চলমান ভিন্ন ভিন্ন ভরের দুটি বস্তু একই দিকে ধাবিত হতে থাকলে এক সময় একটি বস্তু অপর বস্তুকে ধাক্কা দিবে। কিন্তু এ ধাক্কা সম্পন্ন হওয়ার অর্থাৎ ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পূর্বের ও পরের ভরবেগের সমষ্টি সর্বদাই সমান থাকবে। এটিই ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র।