উদ্ভিদ কাকে বলে? উদ্ভিদ কত প্রকার ও কি কি? What is called Plant?

দুটো শব্দ নিয়ে উদ্ভিদ শব্দটি গঠিত হয়েছে। এগুলো হলো উৎ এবং ভিদ। উৎ শব্দের অর্থ হলো উপরে উঠা আর ভেদ শব্দের অর্থ হলো ভেদ করা (অর্থাৎ মাটি ভেদ করে উপরে উঠে আসে)। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য উদ্ভিদের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। চলুন এবার আমরা উদ্ভিদ কাকে বলে? উদ্ভিদের প্রকারভেদ ও শ্রেণীবিন্যাস সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

 

উদ্ভিদ কাকে বলে? (What is called Plant in Bengali/Bangla?)

যেসব জীবের দেহ মূল, কান্ড, পাতায় বিভক্ত এবং যাদের অধিকাংশই সূর্যের আলো থেকে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নিজের খাদ্য নিজেই তৈরি করতে পারে এবং একস্থান থেকে অন্য স্থানে চলাফেরা করতে পারে না তাদেরকে উদ্ভিদ বলে। যেমন – আম গাছ, জাম গাছ, কাঁঠাল গাছ ইত্যাদি।

 

এক কথায় বলা যায়, যা মাটি ভেদ করে উঠে কিন্তু এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাফেরা করতে পারে না তাকে উদ্ভিদ বলা হয়। যেমন – মরিচ, জাম, আম,লিচু, সুপারি গাছ ইত্যাদি।

 

 

 

 

 

 

 

উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Plant)

 

  • উদ্ভিদের মূল, কান্ড, পাতা ও শাখা-প্রশাখা রয়েছে।
  • এরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল করতে পারে না।
  • এরা মূলের সাহায্যে মাটিতে আটকে থাকে।
  • সূর্যের আলো ও পানি ব্যবহার করে এরা নিজেদের খাদ্য নিজেরাই তৈরি করতে পারে।
  • এরা দেখতে পায় না, শুনতে পায় না এবং ঘ্রাণ নিতে পারে না।
  • সূর্যালোক থেকে শক্তি গ্রহণ করে।
  • বেশিরভাগ উদ্ভিদ মাটিতেই প্রোথিত হয়।
  • এরা তুষারময় পাহাড়ের ঢাল থেকে শুষ্ক, গরম মরুভূমি পর্যন্ত, পৃথিবীর প্রায় সবজায়গায় বেঁচে থাকতে পারে।
  • সূর্যের আলো ও পানি ছাড়া উদ্ভিদ বাঁচতে পারে না।
  • উদাহরণঃ ধান, গম, কাঁঠাল গাছ, ভুট্টা, আম গাছ ইত্যাদি।

উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাস বা প্রকারভেদ (Classification of Plant)

পৃথিবীর সব ধরণের উদ্ভিদ নিয়ে উদ্ভিদ জগৎ গঠিত হয়েছে। উদ্ভিদকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো –

 

 

 

 

 

 

  • অপুষ্পক বা ক্রিপটোগ‍্যামস উদ্ভিদ (Cryptogams)
  • সপুষ্পক বা ফ্যানারােগ্যামস উদ্ভিদ (Phanerogams)

অপুষ্পক উদ্ভিদ কাকে বলে?

যেসব উদ্ভিদের ফুল , ফল ও বীজ গঠিত হয় না তাদের অপুষ্পক উদ্ভিদ বলে। যেমন – শৈবাল, ছত্রাক ইত্যাদি।

 

অপুষ্পক উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য :

 

 

 

 

 

 

  • অপুষ্পক উদ্ভিদের ফুল, ফল হয় না।
  • এসব উদ্ভিদের কাণ্ড ও পাতা নেই এবং কিছু কিছু উদ্ভিদের মূলও নেই।
  • অধিকাংশ উদ্ভিদ নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে না।
  • অপুষ্পক উদ্ভিদের মূল মাটির গভীরে যায় না।
  • এসব উদ্ভিদের আকার ছোট ও নরম হয়। উদাহরণ– শৈবাল, ছত্রাক।

অপুষ্পক উদ্ভিদকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো—

 

থ্যালােফাইটা বা সমাঙ্গদেহী

ব্রায়ােফাইটা এবং

টেরিডােফাইটা

থ্যালােফাইটা বা সমাঙ্গদেহীঃ এদের দেহ মূল , কাণ্ড ও পাতায় বিভক্ত নয়। ক্লোরােফিলের উপস্থিতি অনুসারে এদেরকে আবার দুভাগে বিভক্ত করা হয়। যথা—

 

 

 

 

 

 

  • শৈবাল
  • ছত্রাক

শৈবাল : শৈবাল ক্লোরোফিল যুক্ত , স্বভােজী সমাঙ্গদেহী উদ্ভিদ। যেমন – স্পাইরোগাইরা (সূত্রাকার শৈবাল) , ক্ল্যামাইডােমােনাস (এককোশী শৈবাল) , ভলভক্স (উপনিবেশ গঠনকারী শৈবাল)।

 

ছত্রাক : এ জাতীয় উদ্ভিদ ক্লোরােফিল বিহীন এবং মৃতজীবী বা পরজীবী সমাঙ্গদেহী। যেমন – ইস্ট (এককোশী ছত্রাক), মিউকর (অণু সূত্রাকার ছত্রাক), পেনিসিলিয়াম, অ্যাগারিকাস ইত্যাদি।

 

 

 

 

 

 

ব্রায়ােফাইটা : এ ধরণের উদ্ভিদ ‘মস ’ জাতীয়। এসব উদ্ভিদের দেহে কাণ্ড ও পাতা ও মূল থাকে না । মূলের পরিবর্তে এদের রাইজয়েড থাকে । এদের দেহে ক্লোরােফিল থাকায় এরা স্বভােজী । সংবহন কলাতন্ত্র অনুপস্থিত এবং জননাঙ্গ বহু কোশযুক্ত হয়। যেমন– পােগােনেটাম, রিকসিয়া, মারক্যানসিয়া, পলিট্রিকাম ইত্যাদি কয়েকটি সাধারণ মস।

 

 

 

 

 

 

 

টেরিডােফাইটা : এরা ‘ফার্ন’ জাতীয় উদ্ভিদ। এসব উদ্ভিদের দেহে মূল , কাণ্ড ও পাতা উপস্থিত থাকে। এদের ক্লোরােফিল থাকায় এরা স্বভােজী উদ্ভিদ । অপুষ্পক উদ্ভিদদের মধ্যে ফার্ন সবচেয়ে উন্নত। এর কারণ হলো এদের দেহে সংবহন কলাতন্ত্র উপস্থিত রয়েছে। যেমন– ড্রায়ােপটেরিস, মারসিলিয়া, লাইকোপােডিয়াম, সেলাজিনেলা ইত্যাদি ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদ।

 

সপুষ্পক উদ্ভিদ কাকে বলে?

যেসব উদ্ভিদের ফুল , ফল ও বীজ গঠিত হয় , তাদের সপুষ্পক উদ্ভিদ বলে। যেমন– আম, জাম, সুপারি, কাঁঠাল গাছ ইত্যাদি।

 

সপুস্পক উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য

 

 

 

 

 

 

 

 

  • সপুস্পক উদ্ভিদের ফুল ও ফল হয়
  • এসব উদ্ভিদের মূল, কাণ্ড ও পাতা আছে।
  • এসব উদ্ভিদ নিজের খাদ্য নিজেই তৈরি করতে পারে।
  • এসব উদ্ভিদ আকারে বড়, শক্ত ও মজবুত হয়।
  • এসব উদ্ভিদের মূল মাটির গভীরে প্রবেশ করে।

ফলের উৎপত্তি অনুসারে সপুষ্পক উদ্ভিদকে আবার দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা–

 

  • ব্যক্তবীজী উদ্ভিদ
  • গুপ্তবীজী উদ্ভিদ

ব্যক্তবীজী: ব্যক্তবীজী উদ্ভিদের ফল সৃষ্টি না হওয়ায় বীজগুলি নগ্ন প্রকৃতির হয়ে থাকে। যেমন – সাইকাস, পাইনাস, নিটাম ইত্যাদি ব্যক্তবীজী উদ্ভিদ।

 

 

 

 

 

 

 

 

  • এদের কান্ড শক্ত ও গুঁড়িযুক্ত হয়।
  • উদাহরণঃ আম গাছ, কাঁঠাল গাছ, বেল গাছ ইত্যাদি।

 

পুষ্টি অনুসারে উদ্ভিদ জগতের শ্রেণিবিভাগ
পুষ্টি অনুসারে উদ্ভিদ জগৎ দু ধরণের। এগুলি হলো—

  • স্বভোজী পুষ্টি সম্পন্নকারী উদ্ভিদ
  • পরভোজী পুষ্টি সম্পন্নকারী উদ্ভিদ

 

স্বভােজী পুষ্টি সম্পন্নকারী উদ্ভিদ : যে সকল উদ্ভিদ নিজেদের পুষ্টি নিজেরাই সম্পন্ন করতে পারে তাদেরকে, স্বভোজী পুষ্টি সম্পন্নকারী উদ্ভিদ বলে। যেমন – শৈবাল , মস , ফার্ন , ব্যক্তবীজী ও গুপ্তবীজী উদ্ভিদসমূহ ইত্যাদি।

পরভােজী পুষ্টি সম্পন্নকারী উদ্ভিদ : যেসব উদ্ভিদ নিজেদের পুষ্টি নিজেরা সম্পন্ন করতে পারে না তাদেরকে পরভোজী পুষ্টি সম্পন্নকারী উদ্ভিদ বলে। যেমন —

  • মৃতজীবী উদ্ভিদ
  • পরজীবী উদ্ভিদ
  • মিথোজীবী উদ্ভিদ
  • পতঙ্গভুক উদ্ভিদ

মৃতজীবী উদ্ভিদ : যেসব উদ্ভিদ মৃত জৈব বস্তু থেকে পুষ্টিরস সংগ্রহ করে পুষ্টি সম্পন্ন করে , তাদের মৃতজীবী উদ্ভিদ বলা হয়। যেমন – বিভিন্ন প্রকার ছত্রাক এ জাতীয় উদ্ভিদ।

পরজীবী উদ্ভিদ : যেসব উদ্ভিদ অন্য কোন সজীব পোষক উদ্ভিদ থেকে পুষ্টি রস শোষণ করে পুষ্টি সম্পন্ন করে , তাদের পরজীবী উদ্ভিদ বলা হয় । উদাহরণস্বরূপ  স্বর্ণলতা , র‍্যাফ্লেসিয়া , ফাইটোপথােরা ইত্যাদি উদ্ভিদের কথা বলা যায়।

মিথােজীবী উদ্ভিদ : যেসব উদ্ভিদ পুষ্টির জন্য অপর কোনাে জীবের সাহচর্যে জীবন ধারণ করে , তাদের মিথোজীবী উদ্ভিদ বলা হয় । যেমন –  লাইকেন , রাইজোবিয়াম ইত্যাদি।

পতঙ্গভুক উদ্ভিদ : যেসব উদ্ভিদ নাইট্রোজেন ঘটিত প্রােটিন জাতীয় খাদ্যের জন্য পতঙ্গদের দেহ থেকে পুষ্টিরস শােষণ করে , তাদের পতঙ্গভুক উদ্ভিদ বলা হয়। যেমন – কলশপত্রী , ড্রসেরা , পাতাঝাঁজি ইত্যাদি।

উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা
বিভিন্ন কারণে উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাস করা হয়। শ্রেণীবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। নিম্নে এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করা হলো –

  • সারা পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এদেরকে আলাদাভাবে জানা অসম্ভব। তাই আমাদের জানার প্রয়োজনেই উদ্ভিদের শ্রেণীবিভাগ করা প্রয়োজন। শ্রেণীবিন্যাসের মাধ্যমে সহজে সকল উদ্ভিদ সম্পর্কে জানা যায়।
  • উদ্ভিদ শ্রেণীবিন্যাসের কারণে উদ্ভিদ শনাক্ত করা সহজ হয়।
  • উদ্ভিদ সম্পর্কিত জ্ঞানকে সংক্ষেপে প্রকাশ করতে সাহায্য করে।
  • উদ্ভিদের বিভিন্ন কাল নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
  • শ্রেণীবিন্যাসের মাধ্যমেই উদ্ভিদ সম্পর্কে জ্ঞান, বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্তকে সহজ উপায়ে সংরক্ষণ করা যায় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী প্রয়োগ করা যায়।
  • উদ্ভিদের নির্দিষ্ট অবস্থান জানার জন্য শ্রেণীবিন্যাসের প্রয়োজন।
  • কৃষি, বন ও উদ্যান পালন বিদ্যায় উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাস সম্পর্কিত জ্ঞান প্রয়োজন।
  • বিভিন্ন ওষুধ তৈরির জন্য ভেষজ উদ্ভিদ শনাক্তকরণ ও বাছাই করতে শ্রেণীবিন্যাসের জ্ঞান প্রয়োজন।
  • বিশ্বের সব উদ্ভিদকে সহজে আন্তর্জাতিক পরিচিতি প্রদানে শ্রেণীবিন্যাসের জ্ঞান প্রয়োজন। ইত্যাদি।

সুতরাং বলা যায় যে, উদ্ভিদ জগৎকে সহজে জানার জন্য, শনাক্তকরণের জন্য, উদ্ভিদ সম্পর্কে পাওয়া জ্ঞানকে সহজ উপায়ে সংরক্ষণের জন্য এবং সংক্ষেপে প্রকাশ করার জন্য, উদ্ভিদ জগতের বিবর্তন ধারা ও উদ্ভিদজগতের আদি থেকে উন্নত অবস্থান ইত্যাদি জানার জন্য উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাস প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।