চুম্বক কি? চুম্বকত্ব কাকে বলে? চুম্বকের প্রকারভেদ ও ধর্ম

আজকের আর্টিকেলে আমরা চুম্বক কি? চুম্বকত্ব কাকে বলে? চুম্বকের প্রকারভেদ ও ধর্ম, চুম্বক পদার্থ, চুম্বক বলরেখা, চুম্বকের প্রয়োগ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। তাহলে আর দেরি না করে চলুন এসব বিষয় সম্পর্কে জেনে নেই।

 

চুম্বক কাকে বলে? চুম্বক কি?

চুম্বক এক প্রকার শক্তি, যার প্রভাবে কোন জড় বস্তুর আকর্ষণ – বিকর্ষণ ও দিক নির্দেশক ধর্ম লাভ করে, ঐ শক্তিকে চুম্বক বলে। অর্থাৎ, যে সকল বস্তুর আকর্ষণ ও দিক নির্দেশক ধর্ম আছে, তাদেরকে চুম্বক বলে। চুম্বকের রাসায়নিক সংকেত হলো Fe3O4.

 

চুম্বকের মেরু অঞ্চলে অর্থাৎ, দুই মেরুতে আকর্ষণ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। ড. গিলবার্ট ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে চুম্বক ও চুম্বক মেরুর ধর্ম থেকে প্রমাণ করেন যে, পৃথিবী একটি বিরাট চুম্বক। এজন্য চুম্বক সবসময় উত্তর-দক্ষিনে অবস্থান করে। এর উত্তর মেরু এন্টার্কটিকা মহাদেশের দক্ষিণে ভিক্টোরিয়া অঞ্চলে আর দক্ষিণ মেরু কানাডার উত্তরদিকে বুথিয়া উপদ্বীপে অবস্থিত। ভূচুম্বকের উত্তর মেরুকে লাল মেরু এবং দক্ষিণ মেরুকে নীল মেরু বলা হয়।

 

 

 

 

 

 

চুম্বকত্ব কী? চুম্বকত্ব কাকে বলে?

চুম্বকের আকর্ষর্ণীয় ও দিক নির্দেশক ধর্মকে চুম্বকত্ব বলে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, চুম্বকত্ব হলো একটি গতিশীল আদানের প্রভাব। যা উত্তর মেরু থেকে লম্বভাবে বের হয়ে দক্ষিণ মেরুতে যায়। চুম্বকত্ব চুম্বকের একটি ভৌত ধর্ম।

 

চুম্বকের ধর্ম

চুম্বকের সমমেরু পরস্পরকে বিকর্ষণ করে এবং বিপরীতমেরু পরস্পরকে আকর্ষণ করে।

চুম্বুক সর্বদা উত্তর ও দক্ষিণমুখী হয়ে থাকে।

একটি দন্ড চুম্বককে যত টুকরাই করা হোক না কেন তা সর্বদা উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু সৃষ্টি করে। অর্থাৎ চুম্বকের ৪ টি মূল ধর্ম আছে। এগুলো হলো –

 

 

 

 

 

 

 

আকর্ষণ ধর্ম

দিকদর্শী ধর্ম

বিপরীতধর্মী দুই প্রান্ত

চুম্বকন ধর্ম

চারটি ধর্মের কথা বলা হলেও প্রধান ধর্ম হচ্ছে দুটি। এগুলো হলো – আকর্ষণ ও দিকদর্শী ধর্ম।

 

চুম্বক কত প্রকার ও কি কি?

চুম্বক ২ প্রকার। যথাঃ

 

 

 

 

 

প্রাকৃতিক চুম্বক

কৃত্রিম চুম্বক

প্রাকৃতিক চুম্বক কি?

প্রকৃতিতে বা খনিতে যে চুম্বক পাওয়া যায়, তাকে প্রাকৃতিক চুম্বক বলে। পূর্বে প্রাকৃতিক চুম্বককে লোডস্টোন বলা হতো। বর্তমানে প্রাকৃতিক চুম্বকের ব্যবহার নেই বললেই চলে।

 

প্রাকৃতিক চুম্বকের বৈশিষ্ট্য

 

 

 

 

 

 

এ চুম্বকের চুম্বকত্ব স্থায়ী ও শক্তিশালী হয় না।

এ চুম্বকে দুইয়ের অধিক মেরু থাকতে পারে।

এ ধরণের চুম্বক নিয়মিত আকারে থাকে না ইত্যাদি।

কৃত্রিম চুম্বক কি?

মানুষের কাজের উপযোগী বিভিন্ন চুম্বক পদার্থ ব্যবহার করে পরীক্ষাগারে বিভিন্ন আকার আকৃতির যে সকল চুম্বক তৈরি করা হয় তাকে কৃত্রিম চুম্বক বলে।

 

অর্থাৎ, পরীক্ষাগারে লোহা, ইস্পাত, নিকেল, কোবাল্ট ইত্যাদি চৌম্বক পদার্থকে বিশেষ উপায়ে চুম্বকে পরিণত করা হলে তাকে প্রাকৃতিক চুম্বক বলে। সাধারণত শিল্প ও বৈজ্ঞানিক কাজে এ চুম্বক ব্যবহার করা হয়।

 

 

 

 

 

 

কৃত্রিম চুম্বক আবার দুই প্রকার। যথা-

 

অস্থায়ী চুম্বক

স্থায়ী চুম্বক

 

 

 

 

অস্থায়ী চুম্বকঃ চুম্বক পদার্থকে কোন চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে আনলে চুম্বুকে পরিণত হয়। চুম্বকক্ষেত্রটি সরিয়ে নেওয়ার সাথে সাথে এর চুম্বকত্ব লোপ পায়।

 

এটি সাধারণ কাঁচা ও নরম লোহা দিয়ে তৈরি। কলিং বেল, বৈদ্যুতিক ঘন্টা, মটর, স্পিকার, জেনারেটর, ট্রান্সফর্মার ইত্যাদি তৈরিতে অস্থায়ী চুম্বক ব্যবহার করা হয়।

 

স্থায়ী চুম্বক: চুম্বকক্ষেত্র সরিয়ে নিলেও যে কৃত্রিম চুম্বকের চুম্বকত্ব সহজে লোপ পায় না, তাকে স্থায়ী চুম্বক বলে। লোহা, নিকেল, কোবাল্ট, তামা ইত্যাদির মিশ্রণ দিয়ে বর্তমানে শক্তিশালী স্থায়ী চুম্বক তৈরি করা হচ্ছে।

 

 

 

 

 

 

বর্তমানে উদ্ভাবিত সবচেয়ে শক্তিশালী স্থায়ী চুম্বক হলো নিয়োডিমিয়াম, বোরন, আয়রন। লোহার মাঝে ০.৮% এর বেশি কার্বন থাকলে তা স্থায়ী চুম্বক তৈরি করে।

 

স্থায়ী চুম্বক আবার ২ প্রকার। যথাঃ

 

 

 

 

 

 

  • চুম্বক চৌম্বক পদার্থকে আকর্ষন করে আর মহাকর্ষ যে কোন বস্তুকে আকর্ষন করে।
  • চুম্বক আকর্ষন শক্তিশালী অন্যদিকে মহাকর্ষ আকর্ষন দুর্বল।
  • সমমেরুকে বিকর্ষন করে আর মহাকর্ষর কোন মেরু নেই।
  • সকল বস্তুর প্রতি একই আচরন করে , মহাকর্ষ সকল বস্তুর প্রতি একই আচরন করে না।

আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

  • লোহার কুরি তাপমাত্রা ৭৭০°C.
  • হাতুড়ি দিয়ে কোন চুম্বক পেটালে সেটি চুম্বকত্ব হারাবে।
  • তাপমাত্রা বাড়ালে চুম্বকত্ব কমবে।
  • নতুন উদ্ভাবিত সব থেকে শক্তিশালি চুম্বক হচ্ছে বোরন আয়রন নিয়োডিমিয়াম।
  • মেরু অঞ্চলে চুম্বকের আকর্ষণ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশী।
  • চুম্বকের উত্তর মেরু আসলে পৃথিবীর ভৌগলিক দক্ষিণ মেরু।
  • ক্যাসেটের ফিতার শব্দ সঞ্চিত থাকে চুম্বক শক্তি হিসেবে।
  • রাডারে যে তড়িঃ চৌম্বক তরঙ্গ ব্যবহার করা হয় তার নাম মাইক্রোওয়েভ।
  • প্রাকৃতিক চুম্বককে পূর্বে লেডস্টোন বলা হতো।
  • কম্পিউটারের ফিতায় এবং টেপরেকর্ডারে সিরামিক চুম্বক ব্যবাহৃত হয়।

তো আজ এখানেই থাকলো। আশা করি চুম্বক কি, এর ধর্ম, চৌম্বকত্ব, চৌম্বক পদার্থ ইত্যাদি নিয়ে কিছুটা হলেও ধারণা দিতে পেরেছি। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু। ধন্যবাদ