সুশাসন কাকে বলে? সুশাসনের প্রকৃতি ও ধরণ, উপাদান বা ভিত্তি কি?

বর্তমান রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার একটি মার্জিত, কাঙ্ক্ষিত ও সুসংগঠিত রূপ হলো সুশাসন। সুশাসন ধারণাটি মূলত শাসন এর সাথে সু প্রত্যয় যুক্ত হয়ে গড়ে উঠেছে।সুশাসনের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Good Governance. ইংরেজি এই Governance শব্দটি প্রাচীন গ্রিক শব্দ Kubernaein থেকে উৎপত্তি হয়েছে। যার অর্থ হলো – To steer. সুতরাং সুশাসনের অর্থ হলো – নির্ভুল, দক্ষ ও কার্যকরী শাসন। চলুন এবার তাহলে সুশাসন কাকে বলে? সুশাসনের প্রকৃতি ও ধরণ, উপাদান বা ভিত্তি কি? এসব সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

 

সুশাসন কাকে বলে? সুশাসন কি?

যে শাসন ব্যবস্থায় সরকারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও নাগরিকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়, তাকেই সুশাসন বলা হয়।

 

ম্যাককরনী (MacCorney)-এর মতে, “সুশাসন বলতে রাষ্ট্রের সাথে সুশীল সমাজের, সরকারের সাথে শাসিত জনগনের, শাসকের সাথে সাশিতের সম্পর্ক।”

 

 

 

 

 

বিশ্বব্যাংকের মতে সুশাসনের সংজ্ঞা হলো, “Governance is the manner in which power is exercised in the management of a country’s economic and social resources for development.” অর্থাৎ, “সুশাসন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি দেশের অর্থনৈতিক ও সমাজিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়।”

 

পিয়েরে ল্যান্ডেল মিলস ও ইসমাইল সেরাজিল ডিন এর মতে, “জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং ন্যায্য অধিকার উপভোগের নিশ্চয়তা প্রদানের লক্ষ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা চর্চার প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম পরিচালনা প্রক্রিয়া হলো সুশাসন।”

 

 

 

 

 

 

UNDP এর মতে, “একটি দেশের সার্বিক স্তরের কার্যাবলি পরিচালনার জন্য অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক কর্তৃত্বের বিধিবদ্ধ চর্চার বা প্রয়োগের পদ্ধতিই হলো সুশাসন।”

 

মারটিন মিনোগের মতে, “বৃহৎ অর্থে সুশাসন হচ্ছে কতিপয় উদ্যােগের সমাহার ও একটি সংস্কার কৌশল যা সরকারকে আরও বেশি গণতান্ত্রিক মুক্তমনা, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করার জন্য সুশীল সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সক্রিয় করে তোলে।”

 

 

 

 

 

Harris এর মতে, “সুশাসন এমন এক সার্বজনীন ভূমিকা ও প্রাতিষ্ঠানিক কাজের ধারা যা আপনা থেকেই নিয়ম-কানুন ও সেসবের কার্যকারিতার সংঘাতকে নিয়ন্ত্রণ করে।”

 

এক কথায় বলা যায়, যে শাসন ব্যবস্থায় আইনের শাসন, দায়িত্বশীলতা, জবাবদিহিতা, ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ এবং জনগণে অংশগ্রহণ গনতান্ত্রিক উপায়ে সুনিশ্চিত হয় তাকেই সুশাসন বলে।

 

 

 

 

 

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা কর্তৃক সুশাসনের সঙ্গা প্রদানের সময় কাল

সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান সাল

বিশ্বব্যাংক (WB) ১৯৯২

এডিবি (ADB)

আইএমএফ (IMF)

আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (AFDB)

জাতিসংঘ (UN)

ইউএনডিপি (UNDP)

আইডিএ (IDA)

প্রতিষ্ঠানবাদীদের মতে, “অর্থনৈতিক প্রণোদনা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠানসমূহের বিকাশ ও সম্প্রসারণ ঘটাতে সক্ষম নয় সে রাষ্ট্রের পক্ষে ক্রমাগত ত টেকসই উন্নয়ন প্রক্রিয়া লালন করাও সম্ভব নয়। প্রতিষ্ঠানসমূহের বিকাশ ও সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান হলো সুশাসন।”

 

সুশাসনের প্রকৃতি ও ধরণ

শাসনব্যবস্থার একটি ইতিবাচক দিক হলো সুশাসন, যা জনকল্যাণ নিশ্চিত করে দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে। এর প্রকৃতি হলো দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে মানবাধিকার নিশ্চিত করা ও মানবাধিকার সংরক্ষণ করা। সুশাসনের দুটি ধারা লক্ষ্য করা যায়। এগুলে হলো –

 

 

 

 

 

  • বিশ্বব্যাংক এবং
  • পশ্চিমা বিশ্বের পন্ডিত ও তাত্ত্বিকদের মতবাদ

বিশ্বব্যাংক ঋণ প্রদানের সময় সেসব দেশকেই অগ্রাধিকার দিবে যেসব দেশে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকবে। বিশ্বব্যাংক মনে করে জবাবদিহিতার মাধ্যমেই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

পশ্চিমা বিশ্বের পন্ডিত ও তাত্ত্বিকগণের মতে, “সুশাসন হলো গণতান্ত্রিক শাসন এবং গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা তারা সুশাসনের ৪ টি দিকের কথা বলে। এগুলো হলো –

  • সুশাসন হলো অধিকতর রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত শাসনব্যবস্থা।
  • সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য আইনের উপর রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত।
  • রাজনৈতিক প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ। জনগণের কাছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ জবাবদিহিতা করতে হবে।
  • শাসন কাঠামোর অন্যতম দিক হবে প্রশাসনিক দক্ষতা ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা।

সুশাসনের ভিত্তি বা উপাদানসমূহ

বিশ্বব্যাংক প্রবর্তিত সুশাসনের ধারণাটি মূলত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় প্রযুক্ত কতগুলো শর্ত বা বিষয়ের সমন্বিত রূপ। এসব শর্ত বা বিষয়গুলোকেই সুশাসনের উপাদান বলা হয়। এর উপাদানগুলো হলো –

  • মূল্যবোধ
  • ঔচিত্যবোধ
  • স্বচ্ছতা
  • ন্যায়বিচার
  • দায়বদ্ধতা
  • অংশগ্রহণ
  • দায়িত্বশীলতা
  • সমতা
  • দক্ষ প্রশাসন ইত্যাদি।

তবে সুশাসনের উপাদানসমূহ সংস্থা ও রাষ্ট্রভেদে ভিন্নরূপ হয়ে থাকে।