সমবাহু ত্রিভুজ ও সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল এবং পরিসীমার সূত্র

সমবাহু ত্রিভুজ কাকে বলে?

যে ত্রিভুজের সবগুলো বা প্রত্যেকটি বাহুর দৈর্ঘ্য পরস্পর সমান তাকে সমবাহু ত্রিভুজ বলে।

 

অন্যভাবে বলা যায়, ত্রিভুজের কোণগুলোর পরিমাপ পরস্পর সমান হলে তাকে সমবাহু ত্রিভুজ বলে। অর্থাৎ, যে ত্রিভুজের প্রত্যেকটি কোণের মান ৬০০ তাকে সমবাহু ত্রিভুজ বলে।

 

যেহেতু আমরা জানি যে, ত্রিভুজের তিন কোণের সমষ্টি ১৮০০ এবং প্রত্যেকটি কোণের মান সমান, তাই এই ত্রিভুজের প্রত্যেকটি কোণের মান ৬০০। এটি তিন বাহুবিশিষ্ট একটি সুষম বহুভুজ। সুতরাং, এটি একটি সুষম ত্রিভুজ।

 

 

 

 

 

সমবাহু ত্রিভুজের শীর্ষ থেকে ভূমির উপর অঙ্কিত লম্বের দৈর্ঘ্য {\frac{\sqrt{3}}{2} a} যেখানে a হলো সমবাহু ত্রিভুজের বাহুর দৈর্ঘ্য।

 

সমবাহু ত্রিভুজের পরিসীমার সূত্র

পরিসীমার সূত্র জানার আগে চলুন জেনে নেই পরিসীমা কি?

 

 

পরিসীমা কাকে বলে?

পরিসীমা মানে হল দুই মাত্রা বা পরিসরের একটি আকৃতির চারপাশের পথের মোট দৈর্ঘ্য। অর্থাৎ সীমা নির্ধারক রেখাংশ বা রেখাংশসমূহের দৈর্ঘ্যের সমষ্টিকে পরিসীমা বলে। যেমন —

 

(১) আমরা জানি, আয়তক্ষেত্রের ৪ টি রেখাংশ বা রেখা। এদের মধ্যে দুইটি দৈর্ঘ্য নির্দেশ করে এবং বাকি ২ টি প্রস্থ। সুতরাং,

আয়তক্ষেত্রের পরিসীমা হবে = (দৈর্ঘ্য+ দৈর্ঘ্য + প্রস্থ + প্রস্থ) = ২(দৈর্ঘ্য × প্ৰস্থ)।

 

(২) বর্গক্ষেত্রের রেখাংশ ৪ টি। তবে এর ৪ টি রেখাংশ বা বাহুই সমান। তাই বর্গক্ষেত্রের পরিসীমা =৪ \times এক বাহুর দৈর্ঘ্য৩) ত্রিভুজের রেখাংশ ৩ টি। সুতরাং, ত্রিভুজের পরিসীমা = তিন বাহুর দৈর্ঘ্যের যোগফল।

 

বিঃদ্রঃ বৃত্তের ক্ষেত্রে এই পরিসীমাকে পরিধি বলা হয়।বাস্তবক্ষেত্রে, গণিতের এই পরিসীমার যথেষ্ট প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। যেমন, একটি খেলার মাঠের পরিসীমা নির্ণয় করে মাঠের চারিদিকে দেয়া ফেন্সিঙের মোট দৈর্ঘ্য নির্ণয় করা যায় এবং সেই অনুপাতে ফেন্সিং কেনার খরচের হিসাব করা যায়।মনে করি, △ABC এর AB = BC = AC = a একক।

 

সুতরাং পরিসীমা P হলে,

 

P = (a + a + a) একক

 

 

 

∴ P = 3a একক

 

সমবাহু ত্রিভুজের উদাহরণ

ABCaaa

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

  • ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা যায়।
  • সমবাহু ত্রিভুজের বাহুর দৈর্ঘ্য a একক এবং শীর্ষ থেকে ভুমির উপর অঙ্কিত লম্বের দৈর্ঘ্য h একক হলে
    h =  {\frac{\sqrt{3}}{2} a}
  • সমবাহু ত্রিভুজের যেকোন বাহুর মধ্যমা সংশ্লিষ্ট ঐ বাহুর উপর লম্ব।
  • সমবাহু ত্রিভুজ একটি সুষম ত্রিভুজ।
  • সমবাহু ত্রিভুজের বাহুর দৈর্ঘ্য a একক হলে, ক্ষেত্রফল = {\frac{1}{2}}a^2 sin60^o বর্গ একক।
  • সমবাহু ত্রিভুজের যে তিনটি বহিঃবৃত্ত অঙ্কণ করা যায়, তারা (বৃত্ত তিনটি) পরস্পর সর্বসম।
  • সমবাহু ত্রিভুজের বাহুর দৈর্ঘ্য a একক এবং সমান সমান দৈর্ঘ্যের মধ্যমা d একক হলে, 3a2 = 4d2.
  • সমবাহু ত্রিভুজের যেকোন বাহুর লম্বসমদ্বিখণ্ডক ত্রিভুজটিকে দুইটি সর্বসম ত্রিভূজে বিভক্ত করে।
  • সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল ও তার অন্তঃবৃত্তের ক্ষেত্রফলের অনুপাত = 3√3 : π.
  • সমবাহু ত্রিভুজের বাহুগুলোর লম্বসমদ্বিখণ্ডকত্রয় পরস্পর যে বিন্দুতে ছেদ করে তাকে পরিকেন্দ্র (circumcenter) বলে।
  • সমবাহু ত্রিভুজের লম্বতিনটির দৈর্ঘ্য পরস্পর সমান।
  • সমবাহু ত্রিভুজের ভরকেন্দ্র মধ্যমাকে শীর্ষ থেকে ভূমির দিকে 2:1 অনুপাতে বিভক্ত করে।
  • সমবাহু ত্রিভুজের শীর্ষ থেকে বিপরীত বাহুর উপর অঙ্কিত লম্ব ঐ বিপরীতবাহুকে বা ভূমিকে সমদ্বিখণ্ডিত করে।
  • সমবাহু ত্রিভুজের কোণগুলোর সমদ্বিখণ্ডকত্রয়, বাহুগুলোর লম্বসমদ্বিখণ্ডকত্রয়, মধ্যমাত্রয় এবং লম্বত্রয় মূলত একই রেখাংশ।
  • সমবাহু ত্রিভুজের যেকোন এক বাহুর উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রকে {\frac{\sqrt{3}}{4}} দ্বারা গুণ করলে সমবাহু ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল পাওয়া যায়।
  • সমবাহু ত্রিভুজের পরিকেন্দ্র থেকে শীর্ষবিন্দুগুলোর দুরত্ব পরস্পর সমান।
  • সমবাহু ত্রিভুজের অভ্যন্তরস্থ যেকোন বিন্দু হতে বাহু তিনটির উপর অঙ্কিত লম্বের দৈর্ঘ্য d,e ও f একক এবং লম্বের দৈর্ঘ্য h একক হলে, d + e + f = h.
  • সমবাহু ত্রিভুজের যেকোন মধ্যমা ত্রিভুজটিকে দুইটি সর্বসম ত্রিভূজে বিভক্ত করে।
  • সমবাহু ত্রিভুজের শীর্ষকোণগুলোর সমদ্বিখণ্ডক তিনটির দৈর্ঘ্য পরস্পর সমান।
  • সমবাহু ত্রিভুজের লম্বের দৈর্ঘ্য h একক হলে, ভরকেন্দ্র থেকে যেকোন বাহুর উপর অঙ্কিত লম্বের দৈর্ঘ্য {\frac{{h}}{3}} একক।
  • সমবাহু ত্রিভুজের অন্তঃকেন্দ্র থেকে বাহুগুলোর উপর অঙ্কিত লম্বতিনটির দৈর্ঘ্য পরস্পর সমান।
  • সমবাহু ত্রিভুজের অন্তঃবৃত্তের ব্যাসার্ধ r একক এবং শীর্ষ থেকে ভুমির উপর অঙ্কিত লম্বের দৈর্ঘ্য h একক হলে, r = {\frac{{h}}{3}}
  • সমবাহু ত্রিভুজের বাহুর দৈর্ঘ্য a একক এবং শীর্ষ থেকে ভুমির উপর অঙ্কিত লম্বের দৈর্ঘ্য h একক হলে, a : h = 2 : 3.

আজ এ পর্যন্তই। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।