অর্থের কোন পরিবর্তন না ঘটিয়ে এক প্রকার বাক্যকে অন্য প্রকার বাক্যে রূপান্তর করাকে বাক্য রূপান্তর বা বাক্য পরিবর্তন বলে। যেমন – মার হাতেই আমি মানুষ। -> আমার যিনি মা, তাঁর হাতেই আমি মানুষ। দুটি বাক্যের গঠন আলাদা হলেও অর্থ এক।
আবার বলা যায়, মৌলিক বা মূল অর্থের পরিবর্তন না ঘটিয়ে বাক্যের মধ্যে যে রূপগত ও ভাবগত পরিবর্তন আনয়ন করা হয়, সেই পরিবর্তনকেই বাক্য রূপান্তর বা বাক্য পরিবর্তন বলা হয়। বাক্য রূপান্তরের ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন এবং প্রয়োজনে নতুন শব্দ যোগ বা বর্জন করতে হয়।
বাক্য পরিবর্তনের উপায়
বাক্য পরিবর্তন ৩ টি উপায়ে হয়ে থাকে। যেমন –
- বাক্য সংকোচনের মাধ্যমে
- বাক্য সম্প্রসারণের মাধ্যমে
- বাক্যের গঠনগত পরিবর্তন দ্বারা
- বাক্য সংকোচনের মাধ্যমে
যে প্রক্রিয়ায় বাক্যের মূল অর্থ অপরিবর্তিত রেখে বা ঠিক রেখে বাক্যের রূপগত বা ভাবগত পরিবর্তন করা হয় তাকে বাক্য সংকোচন বলা হয়।
বাক্য সংকোচনের মাধ্যমে বাক্য সংক্ষিপ্ত ও গুণসম্পন্ন হয়। এছাড়াও এতে বক্তব্য বিষয় সহজ ও স্পষ্ট হয়। মূলত ৩ টি উপায়ে বাক্য সংকোচন করা হয়। এগুলো হলো –
কৃৎ প্রত্যয়যোগে। যেমনঃ অগ্রে জন্ম যার – অগ্রজ, আকাশে চরে যে – খেচর ইত্যাদি।
তদ্ধিত প্রত্যয়যোগে। যেমনঃ হেমন্তের ফসল – হৈমন্তী, বিমাতার পুত্র – বৈমাত্রেয় ইত্যাদি।
সমাসবদ্ধ শব্দ সহকারে। যেমনঃ অন্য দেশ – দেশান্তর, ন ঐক্য – অনৈক্য ইত্যাদি।
বাক্যের সম্প্রসারণগত পরিবর্তন
বাক্যের মূল অর্থ ঠিক রেখে তার সম্প্রসারিত আকার পরিবর্তনের বিষয়টিকে বাক্য সম্প্রসারণ বলা হয়। যেমন –
মূল বাক্যঃ “চিত্রাঙ্গদা” নৃত্যনাট্য প্রদর্শিত হবে।
সম্প্রসারিত বাক্যঃ আষাঢ়ের এক মেঘ-মেদুর দিবসে শান্তিনিকেতনের আম্রকুঞ্জে সমাগত কবি ও মনীষীদের সম্মুখে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের অমর সৃষ্টি “চিত্রাঙ্গদা” নৃত্যনাট্যের প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
বাক্যের গঠনগত পরিবর্তন দ্বারা
তিন প্রকার বাক্যের মধ্যে ( সরল বাক্য, জটিল বাক্য, যৌগিক বাক্য) যে কোন বাক্যকে উদ্দেশ্য এবং বিধেয় অংশে পরিবর্তন ঘটিয়ে অর্থ অপরিবর্তিত বা ঠিক রেখে একটি বাক্য থেকে অন্য বাক্যে পরিবর্তন করা হয়। এ ধরণের পরিবর্তনকেই বাক্যের গঠনগত পরিবর্তন বলা হয়। যেমন
- সরল বাক্যঃ পতন এলে মানুষ পদে পদে ভুল করে।
- জটিল বাক্যঃ মানুষের যখন পতন আসে তখন পদে পদে ভুল করে।
- জটিল বাক্যঃ যদিও তিনি ধনী তথাপি তিনি অসুখী।
- যৌগিক বাক্যঃ তিনি ধনী কিন্তু অসুখী।
–