আজ আমরা আলোচনা করব ধাতু নিয়ে। ধাতু কাকে বলে? ধাতু কত প্রকার ও কি কি বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।
ধাতু কি? কাকে বলে?
ক্রিয়াপদের মূল অংশকে ধাতু বা ক্রিয়ামূল বলা হয়। অর্থাৎ, ক্রিয়াপদের অবিভাজ্য অংশই ধাতু। ক্রিয়াপদকে ভাঙতে ভাঙতে যখন আর ভাঙা যায় না, তখন সেই অবিভাজ্য অংশটি হচ্ছে ধাতু। ক্রিয়াপদকে ভাঙলে দুটো অংশ পাওয়া যায়। যথা-
ধাতু বা ক্রিয়ামূল
ক্রিয়া বিভক্তি
ক্রিয়াপদ থেকে ক্রিয়া বিভক্তি বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তাই ধাতু। যেমন – করে একটি ক্রিয়াপদ। এর দুটো অংশ রয়েছে- কর + এ। এখানে, কর হলো ধাতু এবং এ হলো ক্রিয়া বিভক্তি।
ধাতুর প্রকারভেদ / শ্রেণীবিভাগ
ধাতু তিন প্রকার। যথাঃ-
মৌলিক ধাতু
সাধিত ধাতু
যৌগিক বা সংযোগমূলক ধাতু
মৌলিক ধাতু
যেসকল ধাতুকে ভাঙা বা বিশ্লেষণ করা যায় না, সেগুলোকে মৌলিক ধাতু বলে। যেমন – চল, পড়,কর, খেল,শোন ইত্যাদি।
বাংলা ভাষায় মৌলিক ধাতুগুলোকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
বাংলা ধাতু
সংস্কৃত ধাতু
বিদেশী ধাতু
বাংলা ধাতুঃ যেসব ধাতু বা ক্রিয়ামূল সংস্কৃত থেকে সোজাসুজি আসে নি, সেগুলোকে বাংলা ধাতু বলা হয়। যেমন – কাঁদ, জান্,নাচ্ ইত্যাদি।
সংস্কৃত ধাতুঃ বাংলা ভাষায় যেসব তৎসম ক্রিয়াপদের ধাতু প্রচলিত রয়েছে তাদের সংস্কৃত ধাতু বলে। যেমন – কৃ,ধৃ,স্থা ইত্যাদি।
বিদেশী ধাতুঃ হিন্দি ও ক্বচিৎ আরবি-ফারসি ভাষা থেকে যেসব ধাতু বা ক্রিয়ামূল বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে,বিদেশী ধাতু বলে। যেমন – হের, মাগ ইত্যাদি।
সাধিত ধাতু
যেসকল ধাতুকে ভাঙা বা বিশ্লেষণ করা যায় , সেগুলোকে সাধিত ধাতু বলে। অর্থাৎ, মৌলিক ধাতু বা কোন কোন নাম শব্দের সঙ্গে আ প্রত্যয় যোগে যে ধাতু গঠিত হয়, তাকে সাধিত ধাতু বলে। যেমন – পড় + আ = পড়া, বল + আ = বলা ইত্যাদি।
গঠনরীতি ও অর্থের দিক থেকে সাধিত ধাতু ৩ প্রকার। যথা
নাম ধাতু
প্রযোজক বা নিজন্ত ধাতু
কর্মবাচ্যের ধাতু
নাম ধাতুঃ বিশেষ্য, বিশেষণ এবং অনুকার অব্যয়ের পরে আ প্রত্যয় যোগ করে যে নতুন ধাতু গঠিত হয় তাকে নাম ধাতু বলে। যেমন – ঘুম + আ = ঘুমানো, বিষ + আ = বিষানো ইত্যাদি।
প্রযোজক বা নিজন্ত ধাতুঃ মোলিক ধাতুর পরে প্রেরণার্থে আ প্রত্যয় যোগ করে প্রযোজক বা নিজন্ত ধাতু গঠিত হয় অর্থাৎ, যে ধাতু দ্বারা কর্তা অন্য কাউকে দিয়ে কোন কাজ করায় তাকে প্রযোজক ধাতু বলে। যেমন – কর + আ = করা। সে নিজে করে না, আরেকজনকে দিয়ে করায়। মা শিশুকে চাঁদ দেখায়। ইত্যাদি ।
কর্মবাচ্যের ধাতুঃ মৌলিক ধাতুর সাথে আ প্রত্যয় যোগে যে ধাতু গঠিত হয় তাকে কর্মবাচ্যের ধাতু বলে। যেমন – দেখ + আ = দেখা। কাজটি ভালো দেখায় না। ইত্যাদি ।
যৌগিক বা সংযোগমূলক ধাতু
বিশেষ্য, বিশেষণ বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সাথে কর্, দে, পা, খা, ছাড় ইত্যাদি মৌলিক ধাতু যুক্ত হয়ে যে ধাতু গঠিত হয়, তাকে যৌগিক বা সংযোগমূলক ধাতু বলে। যেমন – যোগ (বিশেষ্য পদ) + কর্ (ধাতু) = যোগ কর (যৌগিক বা সংযোগমূলক ধাতু) , সাবধান (বিশেষ্য পদ) + হ(ধাতু) = সাবধান হ (যৌগিক বা সংযোগমূলক ধাতু) ইত্যাদি।
যৌগিক বা সংযোগমূলক ধাতু আবার ২ প্রকার। যথাঃ-
যুক্ত ধাতু
যৌগিক ধাতু
যুক্ত ধাতুঃ- বিশেষ্য বা বিশেষণের সাথে কর, খা, দে, হ যুক্ত হয়ে যে ধাতু গঠিত হয় তাকে যুক্ত ধাতু বলে। যেমন – শুরু কর, টাকা দে ইত্যাদি।
যৌগিক ধাতুঃ অসমাপিকা ক্রিয়ার সাথে মৌলিক ধাতু যোগ করে যে ধাতু গঠিত হয়, সেগুলোকে যৌগিক ধাতু বলে। যেমন – উঠে বস, কেটে ফেল ইত্যাদি।