ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের ফলে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে বস্ত্র শিল্পের ব্যাপক উন্নতি হয়। কাপড়ে রং করার জন্য নীলের চাহিদা বাড়তে থাকে। এ ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক ছিল। যেকারণে ইংরেজরা এদেশে নীল চাষ করে। কিন্তু নীলকররা এদেশের চাষীদের বিভিন্নভাবে ঠকাতো। এতে প্রতিবাদ করলে বা চাষ করতে না চায়লে চাষী ও তাঁর পরিবারের উপর অমানবিক অত্যাচার করত। আর এ কারণেই ১৮৫৯ সালে বাংলার নীলচাষীরা সংঘবদ্ধ হয়ে নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল, তা নীল বিদ্রোহ নামে পরিচিত। নীল প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রথম পুরুষ ছিলেন সর্দার বিশ্বনাথ।
পড়ুন – যুক্তফ্রন্ট কি? যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা কর্মসূচি কি কি?
নীল বিদ্রোহের কারণ কি?
নীল চাষের বিদ্রোহের কারণগুলো নিম্নে দেওয়া হলো –
- নীলকররা চাষীদেরকে নীল বুনতে বাধ্য করত। দাদনের টাকা জোর করে দিয়ে চাষীদেরকে দিয়ে জোর করে নীল চাষ করাতে বাধ্য করত।
- নীলকর সাহেবদের কথা অমান্য করলে গুলি করে বা বর্ষা বিদ্ধ করে মেরে ফেলত।
- এক বছরের মাঝে দাদনের টাকা শোধ করতে না পারলে পরের বছর চাষীকে বিনা দাদনেই নীল চাষ করতে হত।
- নীলকররা এদেশের চাষীদের বিভিন্নভাবে ঠকাত।
- কেউ প্রতিবাদ করলে বা নীল চাষ করতে অস্বীকার করলে চাষী ও তার পরিবারের উপর অমানবিক নির্যাতন করত।
- নীলকররা তাদের পছন্দমত জমিতে দাক দিত, এমনকি ক্ষেতের ফসল নষ্ট করে হলেও চাষীদের নীল চাষ করাতে বাধ্য করত।
- কোন চাষী চুক্তি ভঙ্গ করলে তাকে কুঠিতে ধরে এনে আটকে রেখে নির্যাতন করত।
- তাদের কর্মচারীরা প্রজাদের গবাদিপশু চুরি বা ছিনিয়ে নিত।
- আদালতে নালিশ করেও চাষীরা সুবিচার পেত না ইত্যাদি।
আরও পড়ুন – ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন ও ছয় দফাগুলো কি কি?
এসব কারণে নীল চাষীরা সংঘবদ্ধভাবে নীল চাষে অসম্মতি জানায় এবং নীল প্রতিরোধ আন্দোলন করে।