পদার্থ আর শক্তি সত্যিই কি আলাদা?

 

 

 

 

 

 

 

বিজ্ঞানের বহু ধারণার আস্তে আস্তে পরিবর্তন হয়ে আসছে বহুদিন থেকে। একসময়ে ধারণা ছিল যে পদার্থ ও শক্তি সম্পূর্ণ আলাদা। ‘ছিল’ এ কথাই বা বলি কি করে? এখনও পুরোনো মতের বিজ্ঞানীদের কাছে এই ধারণাই হয়তো সত্যি।
কিন্তু গত কয়েক বছরের বিজ্ঞানের অগ্রগতি এ ধারণা ঠিক নয় বলেই প্রমাণ করেছে। কয়েক বছর আগেও বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন যে বিশ্বজগতে পদার্থের পরিমাণ সেই আদিম যুগ থেকে একই রকম থেকে আসছে। শক্তির ক্ষেত্রেও বলা হতো শক্তির পরিমাণও সেই আদিম যুগ থেকে একই রয়ে গেছে। পদার্থ শুধু রূপান্তরিত হচ্ছে, অর্থাৎ এক পদার্থ অন্য পদার্থে পরিণত হচ্ছে; শক্তিরও তেমনি রূপান্তর ঘটছে মাত্র, কিন্তু পদার্থ বা শক্তির কেউই চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে না। এক টুকরো কয়লা পোড়ালে পড়ে থাকে সামান্য একটু ছাই। কয়লা কি তা হলে ধ্বংস হয়ে গেল? আসলে তা নয়। কয়লার ভিতর আছে কার্বন নামে একটি মৌলিক পদার্থ। বায়ুর মধ্যে পোড়ালে কার্বন বায়ুর ভিতরকার অক্সিজেনের সঙ্গে রাসায়নিক উপায়ে মিলিত হয়ে তৈরি করে কার্বন ডাই অক্সাইড। কার্বন ডাই অক্সাইড একটি গ্যাস, তাকে ধরে রাখতে হলে বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োজন। তাই তাকে ধরে রাখতে না পারলে সে উড়ে যায় বাতাসের মধ্যে। আমরা দেখি, কয়লা পুড়ে পড়ে আছে একটুখানি ছাই। কাজেই কয়লার কার্বন ধ্বংস হয়ে গেল এ কথা কোনোক্রমেরই বলা চলে না। আবার কয়লা পুড়িয়ে আমরা পাই তাপ। তাপ দিয়ে পানি ফোটালে তা জলীয় বাষ্প বা স্টিমে পরিণত হয়। এই স্টিমের সাহায্যে ডায়নামো ঘুরিয়ে আমরা পেতে পারি বিদ্যুৎ। তাপশক্তি এখানে বিদ্যুৎশক্তিতে পরিণত হচ্ছে।কাজেই, এ থেকেই বোঝা যায় পদার্থ বা শক্তি অবিনশ্বর।
বিজ্ঞানীদের এ ধারণার গোড়ায় কোনো গলদ নেই। কিন্তু গন্ডগোল বাধল পদার্থকে শক্তিতে পরিণত করা বা শক্তিকে পদার্থে পরিণত করা নিয়ে। কিন্তু এ অসুবিধাও মিটল। আজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোনো বিশেষ অবস্থায় পদার্থ যেমন শক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে, তেমনি আবার বিশেষ অবস্থায় শক্তিকেও পদার্থে রূপান্তরিত করা চলে। তাঁরা আরও বলেছেন, যে পরিমাণ শক্তি বা পদার্থ ব্যবহার করা হচ্ছে, ঠিক সে পরিমাণই পদার্থ বা শক্তি তৈরি হচ্ছে। বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের নাম তোমরা নিশ্চয়ই শুনে থাকবে। তিনিই সর্বপ্রথম এ সম্বন্ধে প্রচুর গবেষণা করে এ ধারণার ভিতি দৃঢ় করেছেন। কাজেই সব দিক দিয়ে বিচার করলে বলা চলে, বিজ্ঞানীদের সেই পুরোনো ধারণাই অনেকটা চলে আসছে আজ পর্যন্ত, তবে তার একটা বিরাট রূপান্তর ঘটেছে, এই যা! আজ পদার্থ বা শক্তিকে আলাদা বিচার করবার প্রয়োজন অনেক পরিমাণে কমে এসেছে। আমরা বলতে পারি, পদার্থ বা শক্তি আসলে একই ব্যাপারের ভিন্ন রূপ মাত্র। সুতরাং পদার্থবিদ্যা এবং রসায়ন শাস্ত্রও আজ আর তেমনটা আলাদা নয়; একই বিজ্ঞানের এরা দুটো দিক মাত্র।