তরঙ্গ (Wave)
প্রথমে তরঙ্গের বৈশিষ্ট্যগুলি জানা দরকার । তাহলে আমরা বিভিন্ন প্রকার তরঙ্গের প্রকৃতি জানতে সক্ষম হব।
তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of wave)
১। কোনো একটি মাধ্যমের বিভিন্ন কণার সম্মিলিত কম্পনের ফলশ্রুতিই হলো তরঙ্গ।
২। তরঙ্গের বিস্তার আছে ।
৩। তরঙ্গের কম্পন আছে ।
৪। তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য আছে ।
৫। তরঙ্গ অগ্রগামী ও স্থির হতে পারে ।
৬। তরঙ্গ আড় বা অনুপ্রস্থ কিংবা লম্বিক বা অনুদৈর্ঘ্য হতে পারে ।
৭। তরঙ্গের তরঙ্গমুখ আছে ।
৮। তরঙ্গ প্রতিফলন, ব্যতিচার, অপবর্তন এবং প্রতিসরণ ঘটায় ।
৯। তরঙ্গ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় শক্তি সঞ্চালিত করে ।
তরঙ্গের প্রকারভেদ (Types of waves)
মাধ্যমের কণাগুলো সরল দোল গতিতে কম্পিত হলে যে তরঙ্গের সষ্টি হয় তাকে সরল দোল তরঙ্গ (Simple harmonic wav) বা সাইন তরঙ্গ (Sine wave) বলে।
সরল দোল তরঙ্গ আবার দুই প্রকারের । যথা—
(১) অনুপ্রস্থ তরঙ্গ (Transverse wave) এবং
(২) অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ (Longitudinal wave)।
১) আড় তরঙ্গ বা অনুপ্রস্থ তরঙ্গ (Transverse wave) মাধ্যমের কণাগুলো তরঙ্গ গতির অভিমূখের সমকোণে কম্পিত হতে থাকলে সেই তরঙ্গকে আড় তরঙ্গ বা অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ বলে । আলোক তরঙ্গ বা তড়িৎ চৌম্বক তরঙ্গ হলো অনুপ্রস্থ তরঙ্গ।
আড় তরঙ্গ বা অনুপ্রস্থ তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of transverse wave)
আড় তরঙ্গের মধ্যে নিম্নলিবিত বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়—
১। যে তরঙ্গের ক্ষেত্রে জড় মাধ্যমের কণাগুলির কম্পনের দিক প্রবাহের দিকের সমকোণী হয় , তাকে আড় তরঙ্গ বন।
২। তরঙ্গ প্রবাহে মাধ্যমে তরঙ্গ শীর্য এবং তরঙ্গ পাদ সৃষ্টি হয়।
৩। মাধ্যমে এর সমবর্তন বা পোলারণ ঘটে।
৪। অনম্যতার বা আকৃতির স্থিতিস্থাপক ধর্মসম্পন্ন মাধ্যমে ( কঠিন ) এই তরঙ্গ উৎপন্ন হয়। প্রবাহীতে পৃষ্ঠটানের দরুন আড় তরঙ্গের সৃষ্টি হয়।
২. লম্বিক তরঙ্গ বা অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ (Longitudinal wave) মাধ্যমের কণাগুলো তরঙ্গের গতির অভিমুখের সমান্তরালে কম্পিত হতে থাকলে , সেই তরঙ্গকে লম্বিক তরঙ্গ বা অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ বলে । শব্দ তরঙ্গ , স্প্রিংন-এ সৃষ্ট তরঙ্গ , ঢোলে বাড়ি দিলে সৃষ্ট তরঙ্গ এবং বাঁশির সুর অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ।
লম্বিক তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of longitudinal wave)
১। যে তরঙ্গের ক্ষেত্রে জড় মাধ্যমের কণাগুলির কম্পনের দিক তরঙ্গ প্রবাহের দিকের সমান্তরাল হয় তাকে লম্বিক তরঙ্গ বলে ।
২। তরঙ্গ প্রবাহে মাধ্যমে সংকোচন ও প্রসারণ সৃষ্টি হয় ।
৩। পর পর দুটি সংকোচন বা পর পর দুটি প্রসারণের মধ্যবর্তী দূরত্বকে বা একটি প্রসারণ ও একটি সংকোচনের মিলিত দৈর্ঘ্যকে তরঙ্গদৈর্ঘ্য বলে ।
৪। মাধ্যমে এর সমবর্তন বা পোলারণ ঘটে না ।
৫। স্থিতিস্থাপক ধর্মসম্পন্ন মাধ্যমে এই তরঙ্গ উৎপন্ন হয় ।
তরঙ্গ সঞ্চালন প্রক্রিয়া
অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গের ক্ষেত্রে মাধ্যমের কণাগুলো সাম্যাবস্থানের উভয় পার্শ্বে তরঙ্গের গতিপথের সমান্তরালে কম্পিত হয়।
ফলে তরঙ্গশীর্ষ বা তরঙ্গাপাদ সৃষ্টি হয় না । এক্ষেত্রে কম্পনের সময় কিছু কিছু স্থানে কণাগুলো কাছাকাছি চলে আসে আবার কোথাও দূরে সরে যায় । কণাগুলো কাছাকাছি আসায় মাধ্যমের সংকোচন ( compression ) হয় এবং কণাগুলো সরে গেলে মাধ্যমের প্রসারণ ( rarefaction ) হয় ।
সংকোচনের স্থানগুলোতে মাধ্যমের ঘনত্ব ও চাপ বেড়ে যায় এবং প্রসারণের স্থানগুলোতে মাধ্যমের ঘনত্ব ও চাপ কমে যায় ।
এভাবে মাধ্যমের কণাগুলোর সংকোচন ও প্রসারণের মধ্য দিয়ে অনুদৈর্ঘ্য বা লম্বিক তরঙ্গ সঞ্চালিত হয়।