টর্ক বা বলের ভ্রামক কাকে বলে? টর্কের একক, মাত্রা, সূত্র, তাৎপর্য

 

টর্ক বা বলের ভ্রামক

Torque or Moment of a force

কোনো দৃঢ় বস্তু একটি বিন্দুকে কেন্দ্র করে ঘুরতে পারে । যেমন দেয়ালে ঝুলানো ফুটো পেরেক ও সুতার সংযোগ বিন্দুর সাপেক্ষে ঘুরতে থাকে। আবার গাড়ির চাকা তার অক্ষের সাপেক্ষে ঘুরতে পারে। কোনো নির্দিষ্ট অক্ষের চারদিকে ঘূর্ণায়মান কোনো বস্তুতে ত্বরণ সৃষ্টির জন্য প্রযুক্ত দ্বন্দ্বের ভ্রামককে টর্ক বা বলের ভ্রামক বলে। একে 𝜏 (টাউ) দ্বারা সূচিত করা হয়।

ব্যাখ্যাঃ ধরা যাক, o বিন্দুতে একটি পাতলা পাত অনুভূমিক অবস্থায় এমনভাবে আবদ্ধ আছে যে তা উলম্ব অক্ষ XOY -এর চতুর্দিকে O কে কেন্দ্র করে ঘুরতে পারে। পাতটিকে তার কোনো বিন্দু C -তে বল প্রয়োগ করে ঘুরালে দেখা যায় যে,

(১) প্রযুক্ত বলের মান যত বেশি হবে, তার ঘূর্ণন সৃষ্টির ক্ষমতাও তত বেশি হবে।

(২) O হতে প্রযুক্ত বল F -এর লম্ব দূরত্ব d যত বেশি হবে, ঘূর্ণন সৃষ্টির ক্ষমতাও তত বেশি হবে।

(৩) বলের ক্রিয়ামুখ O বিন্দু অভিমুখী হলে, পাতটিতে কোনো ঘূর্ণন হবে না।

উপরোক্ত কারণে কোনো অক্ষ বা বিন্দুর সাপেক্ষে কোনো বলের ভ্রামকের মান বলের পরিমাণ ও অক্ষ হতে বলের ক্রিয়া রেখার লম্ব দূরত্ব d -এর গুণফল দ্বারা নির্দিষ্ট হয়।

 

𝜏 = d x F

বা, বলের ভ্রামক বা টর্ক = বল x লম্ব দূরত্ব চিত্র হতে O হতে F বলের ক্রিয়াবিন্দু C –এর দূরত্ব = r ও F বলের ক্লিয়ারেখা NC – এর দূরত্ব = d এবং <NCO = θ নির্দেশ করা হয়েছে।

কাজেই , ON = d = r sinθ

𝜏 = d x F = r F sinθ

 

 

 

টর্কের অবস্থান ভেক্টর

ভেক্টর বীজগণিতের সাহায্যে 𝜏 –কে নিম্ন উপায়ে লেখা হয়,

 

𝜏 = r x F

 

 

 

এখানে r x F যথাক্রমে অবস্থান ভেক্টর ও প্রযুক্ত বল। r ও F যে তলে অবস্থিত 𝜏 –এর দিক হবে ওই তলের অভিলম্ব বরাবর। ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে অর্থাৎ বামাবর্তে (anti-clockwise) ঘূর্ণনের জন্য 𝜏 –এর অভিমুখ হচ্ছে উপর দিকে এবং মান ধনাত্মক। ঘড়ির কাটার দিকে অর্থাৎ দক্ষিণাবর্তে (clockwise) ঘূর্ণনের জন্য 𝜏 –এর অভিমুখ নিচের দিকে এবং মান ঋণাত্মক। ভেক্টর সমীকরণ অনুসারে টর্কের নিম্নোক্ত গাণিতিক সংজ্ঞা দেয়া যায়।

 

সংজ্ঞাঃ অক্ষের সাপেক্ষে ঘূর্ণনরত বস্তুর উপর যে বিন্দুতে বল ক্রিয়াশীল ঐ বিন্দুর অবস্থান ভেক্টর ও প্রযুক্ত বলের ভেক্টর গুণফলকে টর্ক বলে ।

 

 

 

টর্ক বা বলের ভ্রামকের একক

(Unit of torque or moment of force)

এস.আই. পদ্ধতিতে টর্ক বা বলের ভ্রামকের একক নিউটন-মিটার (N-m)

 

টর্ক বা বলের ভ্রামকের মাত্রা সমীকরণ

(Dimension of torque or moment of force)

টর্ক বা বলের ভ্রামকের সংজ্ঞা হতে এর মাত্রা সমীকরণ প্রতিপাদন করা যায়। বলের ভ্রামকের মাত্রা সমীকরণ, [টর্ক বা বলের ভ্রামক] = [বল x দূরত্ব] = [MLT-2 x L ] = [ ML2T-2 ]

 

 

 

টর্কের তাৎপর্য

(Significance of torque)

একটি অক্ষের সাপেক্ষে কোনো টর্ক থেকে বোঝা যায় কোনো একটি নির্দিষ্ট ভরের বস্তুকে কত সহজে ওই অক্ষটির সাপেক্ষে ঘুরানো যাবে। অর্থাৎ টর্ক যত বেশি হবে তত সহজে ওই টর্কের সাহায্যে কৌণিক বেগ পরিবর্তন করা সম্ভব হবে।