প্রবাহীর প্রবাহ
Flow of fluids
আমরা জানি পদার্থ দুই প্রকার। একটি কঠিন (solid) অপরটি প্রবাহী (fluid)। প্ৰবাহী আবার দুই প্রকার। যথা, তরল (liquid) এবং গ্যাস (gas)। যেকোনো প্রবাহী এক স্থান হতে অন্য স্থানে গমন করে। মেঝের উপর পানি ফেলে দেখবে তা এক স্থানে স্থির থাকে না। মেঝের ওপর দিয়ে গড়িয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়। আবার গ্যাস ভর্তি বেলুনের মুখ খুলে দিলে তা সাথে সাথে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। গ্যাস ছড়িয়ে পড়ল কিনা আমরা বুঝতে পারি না।
তবে H২S বা কটু গন্ধযুক্ত কোনো গ্যাস বেলুন থেকে ছেড়ে দিলে দেখব মুহূর্তের মধ্যে তা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং আশপাশের স্থান দুর্গন্ধময় হয়ে পড়ে। এ থেকে আমরা সহজে বুঝতে পারি গ্যাস এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ধাবিত হয়েছে। প্রবাহীর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমন করাকে প্রবাহীর প্রবাহ বলে। প্রবাহ যদি অসংনম্য (incompressjble) হয় এবং এর মধ্যে কোনো অভ্যন্তরীণ বাধা বা সান্দ্রতা (viscosity) না থাকে তবে তাকে আদর্শ প্রবাহী বলে । কার্যত সকল তরলই অসনেম্য। কাজেই তরল পদার্থ প্রবাহীর মতো ক্রিয়া করে।
গ্যাস একটি উচ্চ সংনম্য প্রবাহী। কারণ গ্যাসকে সহজে বদ্ধ পাত্রে প্রবেশ করানো যায়। প্রবাহীরপ্রবাহ অবিচল বা স্থিতিশীল বা অস্থিতিশীল হতে পারে। যেকোনো বিন্দুতে প্রবাহীর বেগ যদি সময়ের সাথে অপরিবর্তিত থাকে তবে প্রবাহীর এই গতিকে স্থিতিশীল বা অবিচল (steady) গতি বলে। যেমন, ধীরে প্রবাহিত স্রোত। অপরপক্ষে প্রবাহীর বেগ সময়ের সাথে যদি অপেক্ষক হয় অর্থাৎ সময় থেকে সময়ে ও বিন্দু থেকে বিন্দুতে পরিবর্তিত হয় তাকে অস্থিতিশীল প্রবাহ বলে। যেমন, সমুদ্রে সৃষ্ট পানির প্রবাহ। প্ৰবাহী সান্দ্র ও অসান্দ্র দুইই হতে পারে। প্রবাহীর সান্দ্রতা ধৰ্ম কঠিন বস্তুর গতিতে ঘর্ষণ ধর্মের মতাে ।
প্রবাহীর প্রকারভেদ
Kinds of fluids
প্রবাহীর প্রবাহ বিভিন্ন প্রকার হতে পারে—
(ক) সম-প্রবাহ (Uniform motion) : যদি সর্বক্ষণ প্রবাহীর বেগ ধ্রুব থাকে, তবে তাকে সমপ্রবাহ বলে।
(খ) অসম প্রবাহ (Non-uniform motion) : যদি সর্বক্ষণ প্রবাহীর বেগ একই না থাকে, তবে তাকে অসমপ্রবাহ বলে।
(গ) স্থির প্রবাহ (Steady motion) : যদি সর্বত্র প্রবাহীর বেগ সমান থাকে, তবে তাকে স্থিরপ্রবাহ বলে।
(ঘ) অস্থির প্রবাহ (Unsteady motion) : যদি সর্বত্র প্রবাহীর বেগ সমান না থাকে, তবে তাকে অস্থিরপ্রবাহ বলে।
(ঙ) ধারারেখ বা সমরেখ বা স্রোতরেখ প্রবাহ (Streamline motion) : যদি প্রবাহীর বিভিন্ন স্পর পরস্পরের সমান্তরালে চলে তবে তাকে ধারারেথ বা সমরেখ বা স্রোতরেপ্রবাহ বলে।
(চ) বিক্ষিপ্ত প্রবাহ (Turbulent motion) : যদি প্রবাহীর স্তর পরস্পরের সমান্তরালে না চলে, বরং গতিতে আবর্ত ও ঘূর্ণির সৃষ্টি করে তবে তাকে বিক্ষিপ্তপ্রবাহ বলে।