অয়ন বায়ু কাকে বলে?
বিষুবীয় অঞ্চলে সূর্যকিরণ লম্বভাবে পতিত হয় বলে বায়ুর চাপ কম থাকে তাতে বায়ু উপরে উঠে ছড়িয়ে যায়। এই বায়ু ক্রমাগত শীতল হয়ে নিচে নামতে না পেরে উত্তর ও দক্ষিণে ছড়িয়ে যায়। প্রায় ৩০০ অক্ষাংশ বরাবর এই বায়ু নিচে নেমে তা আবার বিষুবীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়। ফেরেলের সূত্রানুযায়ী উত্তর গোলার্ধে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ও দক্ষিণ গোলার্ধের দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে এই বায়ু প্রবাহিত হয়। এই বায়ুকেই বলা হয় অয়ন বায়ু। উত্তর গোলার্ধের অয়ন বায়ুকে উত্তর-পূর্ব অয়ন বায়ু ও দক্ষিণ গোলার্ধের অয়ন বায়ুকে দক্ষিণ-পূর্ব অয়ন বায়ু বলা হয়।
প্রাচীনকালে বাণিজ্য জাহাজগুলো এই বায়ুপ্রবাহ অনুসরণ করতো বলে একে বাণিজ্য বায়ুও বলা হয়।
সাধারণত উচ্চচাপ সম্পন্ন এলাকায় অয়ন বায়ু প্রবাহিত হয় বলেই এইসব স্থানে আবহাওয়া উষ্ণ, শুষ্ক ও মেঘমুক্ত প্রকৃতির হয়। পৃথিবীর বড় বড় মরুভ‚মি যেমন-সাহারা, কালাহারি মরুভূমিতে এই বায়ুপ্রবাহের প্রভাব দেখা যায়। উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব অয়ন বায়ু নিরক্ষরেখার কাছাকাছি এসে অত্যধিক তাপে হালকা বায়ু হিসাবে উপরে উঠে যায়। এই সময় নিরক্ষীয় রেখার উভয় দিকে ৫০ অক্ষাংশ পর্যন্ত একটি শান্ত বলয় তৈরি হয় যার নাম নিরক্ষীয় শান্ত বলয় (Doldrum)।
অয়ন বায়ুর বৈশিষ্ট্য
১) এই বায় ২০০ উঃ থেকে ২০০ দঃ অক্ষরেখার মধ্যে প্রবাহিত হয়।
২) শীতকালে এই বায়ুর গতিবেগ বেশি থাকে।
৩) উত্তর পূর্ব বায়ু ঘণ্টায় ১৬ কিমি ও দক্ষিণ পূর্ব অয়ন বায়ু ঘণ্টায় ২২.৪ কিমি বেগে প্রবাহিত হয়।
৪) অয়ন বায়ু প্রবাহিত অঞ্চলের উপরে প্রত্যয়ন বায় প্রবাহিত হয়।
৫) ঋতুভেদে বাণিজ্য বায়ুর গভীরতার হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে।
৬) দুই গোলার্ধ থেকে আগত অয়ন বায়ু নিরক্ষীয় অঞ্চলে মিলিত হয় এবং উলম্ব প্রবাহের সৃষ্টি করে
৭) বাণিজ্য বায়ু যতই নিরক্ষরেখার দিকে প্রবাহিত হয় ততই দুর্বল হয়ে পড়ে।
৮) বাণিজ্য বায়ুর বিস্তার বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন ধরনের হয়।
৯) উলম্বভাবে বাণিজ্য বায়ুর দুটি স্তর দেখা যায়।
১০) আর্দ্র ও প্লাবনশীল বায়ুবিশিষ্ট পৃষ্ঠস্তর এবং শুষ্ক এবং অপ্লাবনশীল বায়ুবিশিষ্ট উর্ধ্বস্তর।
১১) নিরক্ষরেখা অতিক্রম করলে অয়ন বায়ুর দিকে পরিবর্তন হয়।